নেত্রকোনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তিন ব্যক্তিকে সন্দেহ করছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআই বলছে, মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোর রাতে ট্রেনটি ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনে থেমেছিল।
বিমানবন্দর থেকে তিন ব্যক্তি ট্রেনে উঠেছিল। ধারণা করা হচ্ছে ট্রেনের বগিতে আগুন দিয়ে তারা নেমে যায়।
এ বিষয়ে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, প্রাথমিক তদন্ত প্রমাণ করে যে এটি একটি নাশকতামূলক কাজ। এতে জড়িত থাকতে পারে তিন ব্যক্তি। তারা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ট্রেনের তিনটি বগিতে উঠেছিলেন। তারাই ট্রেনের সিটে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিতে পারেন।
তিনি জানান, বিমানবন্দর স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তা পর্যবেক্ষণের কাজ চলছে। ওই ট্রেনে কারা উঠেছিলেন, তেজগাঁও স্টেশন থেকে কারা নেমেছেন তা জানতে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
এদিকে পুলিশ বলছে, বিমানবন্দর থেকে ট্রেনটি ছেড়ে যখন প্রায় ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তেজগাঁও স্টেশনে পৌঁছায় তখন চালক ট্রেনে আগুন লাগার খবর পান। এ বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেনে আগুনের খবর কেন চালক পেলেন না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে সব বিষয়ে আমলে নিয়ে তদন্ত চলছে।
অপরদিকে, প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ বলছে, বিমানবন্দর স্টেশনেই যাত্রীবেশে কে বা কারা ট্রেনে আগুন দিয়েছে। ওই স্টেশন পার হওয়ার পরই আগুন ট্রেনে ছড়িয়ে পড়ে। তবে চালক টের পাননি।
এদিকে রেলওয়ে পুলিশ বলছে, ট্রেনে রেলওয়ের পক্ষ থেকে একজন পরিচালক থাকেন, যিনি ট্রেনের সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন। তাছাড়া প্রতিটি বগিতে একজন করে সুপারভাইজার থাকেন। আগুন লাগার তথ্য দ্রুততম সময়ে চালককে (লোকোমাস্টার) জানানোর দায়িত্বও তাদের। কিন্তু সেটি তারা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি। এ কারণে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন ছাড়িয়ে তেজগাঁও আসার পর চালক আগুন লাগার খবর পান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ট্রেনের বগিতে জিআরপি পুলিশও থাকেন। তবে তারাও আগুনের খবর প্রথমে পাননি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে জেলা ঢাকার পুলিশ সুপার (এসপি) আনোয়ার হোসেন বলেন, বগির সুপারভাইজারের কাছে ট্রেনের পরিচালক ও চালকের ফোন নম্বর ছিল না। এ কারণে তিনি আগুন লাগার তথ্য তাদের জানাতে পারেননি বলে জানতে পেরেছেন তারা।
ওই ট্রেনের চালক দিলীপ কুমার মণ্ডল বলেন, বগিতে আগুন লাগলে সেই তথ্য তাকে না জানালে সেটি চালকের আসনে বসে বোঝা প্রায় অসম্ভব। তবে তেজগাঁও রেলস্টেশনে আসার পর তাকে আগুনের খবর জানালে সঙ্গে সঙ্গে তিনি ট্রেন থামান।
ওই ট্রেনের পরিচালকের দায়িত্বে থাকা খালেদ মোশারফ বলেন, ট্রেনটিতে ১৪টি বগি ছিল। তিনি ছিলেন একেবারে শেষ বগিতে। আগুন লাগে সামনের দিক থেকে ৬ নম্বর বগিতে। আর পেছন থেকে ৮ নম্বর বগিতে। তেজগাঁও রেলস্টেশনে আসার পর তিনি দেখতে পান ট্রেনের সামনের দিকে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ট্রেনের চালককে বিপজ্জনক সংকেত দেন। তখনই ট্রেন থামানো হয়।
তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার পার্বত আলী বলেন, ট্রেনটি সোমবার রাত ১১টার দিকে মোহনগঞ্জ স্টেশন থেকে ছেড়ে ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে বিমানবন্দর স্টেশনে পৌঁছায়।
তিনি বলেন, ট্রেনটি সরাসরি কমলাপুর রেলস্টেশনে যাওয়ার কথা ছিল এবং এর জন্য সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছিল। ভোর ৪টা ৫৮ মিনিটের দিকে ট্রেনটি তেজগাঁও স্টেশনে পৌঁছলে ট্রেনের বগি থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখি। আমি তখনই জরুরি সুইচ চালু করে ট্রেন থামিয়ে দেই। লাল বাতি দেখে ট্রেনটি থেমে গেলেও ট্রেন তেজগাঁও রেলগেটে পৌঁছে গেছে সে সময়।
তিনি জানান, চ, জ এবং ঝ নম্বর বগিতে আগুন লেগেছে। আমরা প্রথমে স্টেশনে ফায়ার ফাইটিং টুল দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি এবং একই সঙ্গে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে ফায়ার সার্ভিসকে জানাই।