তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থানায় নতুন কর্মকর্তা ওসি হিসেবে যোগদান করেছেন মোহাম্মদ আলী মাহমুদ। এর আগে তিনি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কোতোয়ালি থানায় ওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
গত মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে তিনি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ক্যশৈনুর কাছ থেকে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
থানায় যোগদানের আগেই ওসি মো: আলী মাহমুদের বিরুদ্ধে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (ইসি) এর নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি এমএম শাহীনের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মো: হাবিবুর রহমান এবং স্বতন্ত্রপ্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সদ্য উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ প্রাপ্ত একেএম সফি আহমদ সলমান।
গত ১০ ও ১১ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে পৃথকভাবে আবেদন দু’টি জমা দেয়া হয়। যার অনুলিপি দেয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ, সচিব নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী, সদ্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগকৃত ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ এ কে এম সফি আহমদ সলমানের লিখিত অভিযোগ উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রীর আশ^াসে ও নির্বাচন কমিশনের অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের ঘোষণায় তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
কুলাউড়া আসনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রাথী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের জন্ম ও রাজনৈতিক কর্মস্থল সিলেট শহরে হওয়ায় তাঁর সহযোগিতায় ও যোগাযোগিমূলক ভাবে সিলেট কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আলী মাহমুদকে কুলাউড়া থানায় বদলী করা হয়েছে এবং এই ওসির সাথে শফিউল আলম নাদেলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় জনমনে উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। ওসির কুলাউড়া আগমনের সংবাদে নাদেলের কর্মী সমর্থকরা আনন্দ উল্লাস ও মিষ্টি বিতরণ করেছে। সিলেট শহরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও অস্ত্রবাজরা ইতোমধ্যে কুলাউড়া শহরে অবস্থান নিয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সভা সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে তৃণমুল বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি এম এম শাহীনের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মো: হাবিবুর রহমানের লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, কুলাউড়া আসনে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী একজন প্রার্থীর অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ওসি মো: আলী মাহমুদ। তাদের দুজনের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। নির্বাচন কমিশন তদন্ত করলেই অভিযোগের বিষয়টি সত্য প্রমাণিত হবে বলে তিনি দৃঢ় বিশ^াসী। ওই আসনে প্রতিন্ধিতাকারী চীফ ইলেকশন এজেন্ট হিসেবে তাঁর আশঙ্কা আলী মাহমুদ ওসি হিসেবে বদলি করা হলে প্রশাসনের প্রভাব খাটিয়ে তিনি ওই প্রার্থীর পক্ষাবলম্বন করতে পারেন। এতে ওই আসনে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী অন্যান্য প্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন। তাছাড়া সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের অঙ্গীকারের পথেও মৌলভীবাজার-২ আসনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন ওসি আলী মাহমুদ।
অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচনের স্বার্থে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ওসি আলী মাহমুদকে কুলাউড়া থেকে অন্যত্র বদলী করার জন্য দুই প্রার্থী প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে কুলাউড়া থানার নবাগত ওসি আলী মাহমুদ আওয়ামীলীগের প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের সাথে সম্পর্কের বিষয়ে মুঠোফোনে বলেন, আমার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। উনার বাড়ি কুলাউড়া। উনার প্রতি আমার কোন আলাদা দুর্বলতা নেই। তাছাড়া আমি সিলেটে পড়াশোনা করিনি। চাকুরী করেছি সিলেটে। পুলিশে যারা ওসি হিসেবে চাকুরী করে তাদের সমাজের সবার সাথে পরিচয় থাকে। ওসির চেয়ারটা সবার জন্য উন্মুক্ত।
দুই প্রার্থীর আনা অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত নই। আমাদের বদলীটা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে পুলিশ হেডকোয়াটার্স থেকে। এ বিষয়ে আওয়ামীলীগের প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল নবাগত ওসি আলী মাহমুদ প্রসঙ্গে বলেন, সম্পর্ক তো অনেকের সাথে থাকতেই পারে। সিলেট কিংবা ঢাকায় কাজ করার সুবাধে দেশের অনেকের সাথে আমার পরিচয় আছে। ওসি কি নির্বাচনে পাশ করানোর ক্ষমতা রাখেন? ভোট তো দিবে জনগণ। বদলী বিষয়ে আমার কোন ধারণা নেই। এটা তাদের ডিপার্টমেন্টের বিষয়।