আবু বকর ছিদ্দিক রনি, শার্শা প্রতিনিধিঃ
বর্ষা কিংবা মুষলধারে বৃষ্টি নয়, এবার ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতেই তলিয়েছে যশোর শহরের নিম্নাঞ্চল। বিশকিছু জায়গায় পানি উঠায় ঘর থেকে বের হয়ে বিপাকে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ। খাল ও নালাগুলো পরিষ্কার না করায় শীতকালেও জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।
গতকাল সন্ধ্যা থেকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে যশোর পৌর এলাকায়। সামান্য বৃষ্টিপাতেই তলিয়ে গেছে যশোর শহরের নিম্নাঞ্চল। খুবই ধীরগতিতে পানি নিষ্কাশন হওয়ায় তলিয়ে আছে শহরের বিভিন্ন এলাকা। ড্রেন উপচে পানি প্রবেশ করেছে সড়কে। সড়ক ছাপিয়ে সেই পানি ঢুকে পড়েছে উঠানে ঘরবাড়িতে। ভোগান্তিতে পড়েছেন শহরের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। নাগরিকদের অভিযোগ- শহরের ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিস্কার না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
যশোর বিমানবাহিনী নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া অফিস থেকে জানা গেছে, যশোরে বৃহস্পতিবার ২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই পরিমাণ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। আগামী শনিবার থেকে বৃষ্টিপাত কমে আসতে পারে বলে জানিয়েছে যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির আবহাওয়া দপ্তর।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, সামান্য গুড়িগুড়ি বর্ষনেই জলমগ্ন হয়ে আছে যশোরের রাস্তাঘাট। প্লাবিত হয়ে আছে যশোর পৌরসহ আশেপাশে এলাকা। এসব এলাকার অনেকের বসত ঘরেও পানি ঢুকেছে। ঘরে ও বাইরের জলাদ্ধতায় চরম ভোগান্তিতে আছেন ওই এলাকার মানুষেরা।
যশোর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, যশোর শহরের ড্রেনের পানি প্রবাহের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই যশোর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের অন্তত ২০টি সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শহরের খড়কি এলাকার শাহ আবদুল করিম সড়ক, শহরের পিটিআই সড়কের একপ্রান্ত, নাজির শংকরপুর, খড়কি রূপকথা মোড় থেকে রেললাইন, বেজপাড়া চিরুনিকল মোড়, মিশনপাড়া, আবরপুর, বিমানবন্দর সড়ক, ষষ্ঠীতলাপাড়া, শংকরপুর চোপদারপাড়া, স্টেডিয়ামপাড়া, নীলরতন ধর রোডসহ বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসব এলাকার বাড়িঘরেও পানি ঢুকে পড়ে।
শহরের বিভিন্ন শ্রেণি—পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের ভেতর দিয়ে ভৈরব ও মুক্তেশ্বরী নামে দুটি নদ—নদী বয়ে গেছে। এর মধ্যে ভৈরব নদ দিয়ে শহরের উত্তরাংশ ও মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে শহরের দক্ষিণাংশের পানি নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু গত দেড় দশক শহরের দক্ষিণাংশের পানি মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে নামতে পারছে না। পয়োনিষ্কাশন নালার মাধ্যমে শহরের পানি হরিণার বিল দিয়ে মুক্তেশ্বরী নদীতে যেত। কিন্তু ২০১০ সালে হরিণার বিলে যশোর মেডিকেল কলেজ এবং এর আগে সেখানে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল স্থাপিত হয়। এরপর আশপাশে আরও অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এতে বিল দিয়ে পানি আগের মতো নিষ্কাশিত হতে পারছে না।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী শনিবার থেকে বৃষ্টিপাত কমে যেতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় যশোরে ২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন দীর্ঘ সময় ধরে মুষলধারে বৃষ্টি না হলেও বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশের বেশিরভাগ ড্রেন দিয়ে পানি নামছে না। এ কারণে পানি উপচে সড়ক ডুবে যাচ্ছে। শহরের বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি অফিসের সামনে পানি উঠেছে। এর মধ্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, শিক্ষাবোর্ড অন্যতম। এসব প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে সংশ্লিষ্টদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এছাড়াও পাড়া—মহল্লার রাস্তাঘাট, বাসাবাড়িতেও পানিতে একাকার হয়ে গেছে।
পৌরসভার রেলবাজারের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছে। একই অবস্থা খড়কির শাহ আবদুল করিম সড়কের। এম এম কলেজের দক্ষিণ গেটের পাশে খড়কি মোড়ে হাঁটুপানি। চলাচল অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া শহরের কারবালা, স্টেডিয়াম পাড়া, সার্কিট হাউজপাড়া, রায়পাড়া, শংকরপুর, ঘোপ কবরস্থান পাড়া, বেজপাড়া, তালতলা, নলডাঙ্গা রোড এলাকা, টিবি ক্লিনিকপাড়া, আশ্রম রোড এলাকা, বরফ কলের মোড়, লোন অফিসপাড়া, বড় বাজার এলাকার আবাসিক এলাকা, ষষ্ঠীতলা, এম.এম কলেজ রোড, ফায়ার সার্ভিস অফিস, জেলা শিক্ষা অফিসের ভেতরে পানিতে একাকার হয়ে গেছে। এই বৃষ্টিতে শহরের অনেক রাস্তার ওপর পানির স্রোত বইছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও শহরের সমস্ত পানি নিষ্কাশনের যে ড্রেন তা গত চার বছর পরিস্কার করে না পৌরসভা, সে কারণে এ ভোগান্তি।
শহরের শংকরপুর এলাকার আব্দুল মাজেদ বলেন, যশোর শহরের পানি নিষ্কাশন হয় শহরের দক্ষিণ পাশের বিল হরিণায়। সেখান থেকে মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে পানি বেরিয়ে যায়। কিন্তু গত চার বছর ধরে বিল হরিণায় পানি নিষ্কাশনের যে ড্রেন তা পরিস্কার করে না পৌরসভা।
এ বিষয়ে পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহেদ হোসেন নয়ন বলেন, এলাকাবাসীসহ তিনি নিজে পৌর মেয়রের কাছে এ বিষয়ে জানিয়েছেন কিন্তু ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে পৌরসভা এ দুর্ভোগ নিরসনের স্থায়ী পরিকল্পনা নিচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য যশোর পৌরসভার মেয়র হায়দারগনি খানের সঙ্গে মুঠোফোন একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকসিমুল বারী বলেন, শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে আসলে এই মুহূর্তে পৌরসভার কিছুই করার নেই। নালা পরিষ্কার করলেও পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার পানি নিষ্কাশিত হতে পারছে না। কারণ, হরিণার বিল দিয়ে এসব এলাকার পানি নিষ্কাশিত হতো। সেই হরিণার বিলে অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এই পানি নিষ্কাশনের জন্য ২০ মিটার চওড়া সাড়ে চার কিলোমিটার লম্বা একটি খাল খনন করে বৃষ্টির পানি মুক্তেশ্বরী নদীতে নামিয়ে দিতে হবে। কিন্তু এই খাল খননের মতো এত টাকা পৌরসভার নেই। তবে আশার কথা হচ্ছে, প্রায় ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে। ওই প্রকল্পে এই খাল খননের বিষয়টি সংযুক্ত করা হবে।