দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ছড়াছড়ি হলেও ৩২টি আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। আসনগুলোর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট কয়েক জন প্রার্থীর আসন রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকায় এবং ডামি প্রর্থী না দেওয়ার কারণে এসব আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের কর্মকর্তারা। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা দলের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে ইসি। সংস্থাটির দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী নির্বাচনে আসা নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ২৯টি। তবে ইসির এ তালিকায় নির্বাচন বর্জনকারী একটি দলও রয়েছে। যা নিয়ে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলটির মহাসচিব নিজেই। ফলে ইসির এ তালিকা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ইসির তথ্যানুযায়ী, ৩২টি আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। এই আসনের মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যতম সদস্য আমির হোসেন আমু, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শেখ হেলাল উদ্দিন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ক ম রুহুল হক, সাবের হোসেন চৌধুরী, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের আসন।
ইসির হিসেব অনুসারে ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন; যা গতবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় প্রায় ২৬০ জন বেশি। এবার যে ৩২টি আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই সেগুলো হচ্ছে—ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪. কুমিল্লা-৯ ও কুমিল্লা-১০, নোয়াখালী-৫, চট্টগ্রাম-৭, ৯ ও ১৩, কক্সবাজার-২, পঞ্চগড়-২, মাগুরা-১, বাগেরহাট-১, পটুয়াখালী-১, শরীয়তপুর-৩, সিলেট-৪ ও ৬, কিশোরগঞ্জ-৪, মানিকগঞ্জ-৩, ঢাকা-১, ঢাকা-৯, ঢাকা ১৫, নারায়ণগঞ্জ-৫, মাদারীপুর-১ ও ২, টাঙ্গাইল-১, টাঙ্গাইল ৮, ময়মনসিংহ-৯, ভোলা-২, বরিশাল-১, ঝালকাঠি-২, বগুড়া-৫ সিরাজগঞ্জ-২ এবং পাবনা-৫ আসন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যে বিভ্রান্তি :নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০৩ জন প্রার্থী দিয়েছে জানালেও হিসেবে গরমিল পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন থেকে গণমাধ্যমকে দেওয়া প্রার্থী তালিকায় চট্টগ্রাম-আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নাম দুইবার লেখা হয়েছে। ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর-উত্তম আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও নির্বাচন কমিশন তাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছে।
আরো আট প্রার্থীকে শোকজ: নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে আরও ছয় প্রার্থীকে শোকজ করেছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। এর মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন, সিলেট-২ আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মো. ইয়াহইয়া চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. মোহাম্মদ সাদিক, ঢাকা-২০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাদ্দেছ হোসেন, গাইবান্ধা-১ আসনে জাতীয় পার্টি-জাপার প্রার্থী শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গাইবান্ধা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আফরুজা বারী, নারায়ণগঞ্জ-৩ জাপার প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমান। বৃহস্পতি ও শুক্রবার আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে সরকারের চারজন মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি-জাপা ও স্বতন্ত্রসহ অন্তত ৩৬ জন প্রার্থীকে শোকজ করে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি। তাদের মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে শোকজের জবাবও দিয়েছেন।