তাসলিমুল হাসান সিয়াম,গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধায় ইট ভাটা গুলোতে শুরু হয়েছে ইট তৈরির মৌসুম। ইটের মৌসুমকে ঘিরে পুরাতন অসংখ্য অবৈধ ইটভাটার পরও নতুন অবৈধ ইটভাটা স্থাপন হচ্ছে লোকালয়ে, কৃষিজমিতে, গ্রামগঞ্জ শহর বন্দরের সন্নিকটে, । পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠা এসব ইটভাটার অধিকাংশই ছাড়পত্র নেই। এসব ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে জ্বালানি কাঠ।

এছাড়া আধুনিক প্রযুক্তির পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে ৯৫ থেকে ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনি। কাঠ পোড়ানো ও স্বল্প উচ্চতার ড্রাম চিমনি ব্যবহার করায় ইটভাটাগুলোতে নির্গত হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে কালো ধোঁয়া। এতে জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

অনেকেই না বুঝে নগদ টাকার আশায়, কেউবা বাধ্য হয়ে ইটভাটাগুলোতে বিক্রি করছে ফসলী জমির উর্বর মাটি। এতে একদিকে যেমন বিপর্যয় ঘটছে পরিবেশের, অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়ছে জেলার খাদ্য নিরাপত্তা।

গাইবান্ধা জেলার সাত উপজেলায় ইটভাটা রয়েছে ২শ’র বেশি। এরমধ্যে অনুমোদন আছে মাত্র ১৪টির, আর জেলা প্রশাসনের কাছে তথ্য আছে ১৭১টির।

জানা যায়, প্রতি বছর প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে গাইবান্ধা জেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে নতুন নতুন ইটভাটা। আর এসব ইটভাটায় মাটির যোগান দিতে হারিয়ে যাচ্ছে উর্বর ফসলি জমি। গত বছর ভালো আবাদ হয়েছিল যে জমিগুলোতে, বর্তমানে সেসব জমিতেই এখন হচ্ছে না ফসলের চাষ। ইটভাটার জন্য জমির ওপরের উর্বর মাটি কেটে নেয়ায় জমিগুলোর এখন বেহাল দশা।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, ভাটার মালিকরা প্রথমে কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে মোটা টাকায় মাটি কেনার চুক্তি করেন। ওই কৃষকদের জমি থেকে মাটি কেটে নেবার পর সে জমির আশেপাশের জমিগুলোও হারিয়ে ফেলে পানি ধারন ক্ষমতা। ফলে আবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বাধ্য হয়ে ইটভাটার মালিকদের কাছে মাটি বিক্রি করছেন অন্য কৃষকরাও।

ইটভাটার আগ্রাসনে শুধু ফসলী জমির মাটিই সাবাড় হচ্ছে না, আবাসিক এলাকা, প্রধান সড়ক ও ফসলী জমির মাঝে ভাটা স্থাপন করায় মারাত্মকভাবে দূষণ হচ্ছে পরিবেশের, ফলন ক্ষমতা হারাতে বসেছে গাছপালা। নষ্ট হতে বসেছে জেলার অধিকাংশ কাঁচা-পাকা সড়ক।

অবৈধ ইটভাটা চলার কথা স্বীকার করে জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল লতিফ হক্কানী বলেন, ‘নতুন আইনের নানা জটিলতায় অনুমোদন না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে ভাটা মালিকরা অবৈধ ইটভাটা চালাচ্ছেন।’

এদিকে, জেলায় এভাবে ইটভাটা গড়ে উঠা অপ্রত্যাশিত জানিয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, অনুমোদনহীন ইটভাটা বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে এবং পর্যায়ক্রমে সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেয়া হবে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version