একুশ শতকে এসেও একটি দেশের সাথে আরেকটি দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে। একটি দেশ অন্য একটি দেশের উপর নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য ভয়াবহ আগ্রাসন চালাচ্ছে। যুদ্ধ ধ্বংস করে চলছে মানবিকতা, মূল্যবোধ, বিশ্ববিবেক এবং সব সৃজনশীলতাকে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব দেখে চলছে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে চালানো দখলদার ইসরায়েলের বর্বরতম হামলা। ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশগুলোর যুদ্ধ ক্রমান্বয়ে ভয়ংকর রুপ ধারণ করছে এবং বিশ্বকে আবার নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। রাশিয়ার চালানো এই হামলায় ইউক্রেনের হাজার হাজার মানুষ নিহত এবং আহত হচ্ছে। ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো গুলো ধ্বংস হচ্ছে এবং সাধারণ ইউক্রেনিয়দের বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলো বিধ্বস্ত হচ্ছে। এই যুদ্ধের ফলে ইউক্রেন সহ সারাবিশ্বের অর্থনৈতির উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে এবং নানা ধরনের বৈশ্বিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলার পর থেকে ৮.৮ মিলিয়নের ও বেশি ইউক্রেনীয় দেশ ছেড়েছে এবং আরও লক্ষাধিক অভ্যন্তরীন ভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবথেকে বড় শরনার্থী সংকটের সূত্রপাত করে।
এমনিভাবে ইসরায়েলের নেতানিয়াহু সরকারের ফিলিস্তিনের নিরীহ মানুষের উপর হামলা তীব্র থেকে তীব্র রুপ ধারণ করছে। সাম্প্রতিক সময়ের ইসরায়লী সেনাদের স্থল অভিযানে শত শত ফিলিস্তিনি শহীদ হচ্ছে আহত হচ্ছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই নারী এবং শিশু। ইসরায়েলের এই হামলার ফলে ফিলিস্তিনের গাঁজায় তৈরী হয়েছে চরম মানবিক সংকট। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতি মোকাবেলায় বিশ্বনেতৃবৃন্দের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। যুদ্ধ কখনোই ভালো কিছু নিয়ে আসেনা। মানবসভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে মানবিক সমাজ, রাষ্ট্র, পৃথিবী গড়ে তুলতে হলে সৃজনশীল চিন্তা ও উন্নত পৃথিবীর জন্য যুদ্ধ বন্ধের বিকল্প নেই। যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া দেশগুলো প্রতি বছর সামরিক খাতে যে পরিমাণ ব্যয় করে সেই পরিমাণ অর্থ দিয়ে গোটা পৃথিবীর মানুষের একবছরের খাদ্য ও শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।
এমতাবস্থায় বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের এসব যুদ্ধ বন্ধে দ্রুত জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম রাইসি বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিং পিং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এসব বিশ্ব নেতাদের যুদ্ধ বন্ধে এবং এসব যুদ্ধের সহিংসতা এড়াতে দ্রুত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে। এছাড়াও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের এসব যুদ্ধ বন্ধে নিরাপত্তা পরিষদে গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন ডাকা দরকার। এসকল প্রভাবশালী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনেতাদের সকলকে একত্রিত হয়ে আলোচনা এবং বিভিন্ন চুক্তি ও শর্তের মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান করতে হবে। পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তাররোধ সহ এসব মারাত্মক অস্ত্রঝুঁকি থেকে বিশ্বকে রক্ষা করতে হবে। বিশ্ব নেতাদের নারী ও শিশুদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার এজেন্ডাকে অব্যাহত রাখতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হতে হবে। বিশ্ব নেতাদের এসব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বাস্তবে রুপান্তরিত হলে বিশ্ব এসব যুদ্ধ সংঘাত সহিংসতার হাত থেকে রক্ষা পাবে। বিশ্বে শান্তি শৃঙ্খলা বিরাজমান থাকবে।
মোঃ তরিকুল ইসলাম লিখন
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়