তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন গৃহবধূ (১৯)। সেখানে স্থানীয় কয়েকজনের সাথে ঝামেলা হয় ওই গৃহবধূর স্বামীর। ওই রাতে সালিসে বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য বৈঠক হয়।
সেই সালিসে যোগ দেন গৃহবধূর সহপাঠি ও তার সহযোগী একাধিক যুবক। পরে তারা গৃহবধূকে বোঝানোর জন্য একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন এবং মোবাইলে চিত্রধারণ করে চাঁদা দাবি করেন।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অবিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে শাকিব মিয়া (২২) নামের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ।
রোববার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে কুলাউড়া পৌর শহরের লস্করপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শাকিবের বাড়ি উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের লৈয়ারই এলাকায়।
মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রের বরাতে জানা গেছে, গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায়। সম্প্রতি তিনি কুলাউড়া উপজেলায় বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। শাকিব গৃহবধূর সহপাঠী। সেই সুবাদে তার স্বামীর সঙ্গে পরিচয় ছিল। ৩ নভেম্বর গৃহবধূর স্বামী তাকে বাড়ি নিয়ে যেতে কুলাউড়ায় আসেন। পর দিন ৪ নভেম্বর তুচ্ছ একটি বিষয় নিয়ে তার স্বামীর সঙ্গে স্থানীয় কিছু লোকের ঝামেলা হয়। বিষয়টি সমাধানের জন্য ওই দিন রাতে গৃহবধুর বাড়িতে সালিস বসে। সালিসে ইউপি সদস্য আলিম উদ্দিন ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের পূর্ব মনসুর গ্রামের বাসিন্দা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা সুন্দর আলী, জয়চন্ডী ইউনিয়নের রায়গ্রামের বাসিন্দা রনধীর ঘোষ ও গৃহবধূর সহপাঠী শাকিব মিয়াসহ স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
সালিসের শেষ পর্যায়ে শাকিব গৃহবধূকে আলাদা একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে তাকে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বলেন। একপর্যায়ে রাত ১ টার দিকে আসামি শাকিব (২২), সুন্দর আলী (৩২) ও রনধীর ঘোষ (৪০) ওই কক্ষে প্রবেশ করে গৃহবধূকে বাথরুমে নিয়ে ওড়না ও জামা দিয়ে হাতমুখ বেঁধে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। এসময় তারা মোবাইল ফোনে আপত্তিকর দৃশ্য ধারণ করে রাখেন। চলে যাওয়ার সময় তারা এ বিষয়ে কাউকে কিছু না বলতে তাকে ভয়ভীতি দেখায় বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন ওই নারী।
পর দিন (৫ নভেম্বর) সুন্দর আলী ও রনধীর বাড়িতে গিয়ে ধর্ষণের ঘটনার ভিডিও দেখিয়ে তাঁদের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন। একপর্যায়ে গৃহবধূর মা নগদ ৪০ হাজার টাকাসহ ব্যাংক চেকের দু’টি পাতা দেন। ওই দিন শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে স্বজনেরা তাকে মৌলভীবাজার জেলা সদর ২৫০ শয্যার হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। সুস্থ হওয়ার পর ১২ নভেম্বর নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ কুলাউড়া থানায় গিয়ে সুন্দর, রনধীর ও শাকিবকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এদিকে ঘটনার এক সপ্তাহ পর রোববার (১৮ নভেম্বর) রাতে মামলা এজাহারভুক্ত হয়।
কুলাউড়া থানার ওসি মোঃ আব্দুছ ছালেক বলেন, ওই গৃহবধু থানায় এসে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন নিয়ন্ত্রণ আইনে তিন’জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তার হওয়া শাকিবকে মৌলভীবাজার আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।