রুহুল আমিন,ডিমলা (নীলফামারী)
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়ন’র ছোটখাতা সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র পাঁচজন। অথচ তাদের পাঠদানের জন্য শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন চারজন।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) দুপুর ১২.৩০ মিনিটে এমন চিত্রই দেখা গেছে সরেজমিনে স্কুলটি পরিদর্শনে গিয়ে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিই নয়, প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পঞ্চম শ্রেণীতে তিনজন, তৃতীয় শ্রেণীতে দুইজন এবং চতুর্থ শ্রেণীতে কোন শিক্ষার্থী নাই। মাত্র পাঁচজন শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত আছে। আর শিক্ষক আছেন চারজন। উপস্থিত শিক্ষার্থীদের পাঠদান না করে অফিস কক্ষে বসে গল্প করছিলেন সহকারী শিক্ষক ফারমেনা ও মিলি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরবানু হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে গেছেন বাহিরে। মুঠোফোনে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন অফিসের কাজে বাহিরে আছি।মুভমেন্ট খাতায় উল্লেখ করেননি কেন? বলতেই ফোন কেটে দেন তিনি। অপর সহকারী শিক্ষক আরজুমান বর্তমানে মাতৃকালীন ছুটিতে। অফিস কক্ষ ধুলা-ময়লা, আবর্জনা ও মাকড়সার জালে পরিপূর্ণ। প্রধান শিক্ষকের কক্ষের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি। অথচ সরকারি, বেসরকারি ও শায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ছবি দুইটি টাঙ্গানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
অফিস কক্ষে ”বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর” ছবি নাই কেন? জিজ্ঞেস করলে বলেন, চুরি হয়ে যায়, তাই অন্যত্র রেখে দিয়েছি। বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিতি কতজন জানতে চাইলে তেনারা বলেন, এগুলো দেখার দায়িত্ব শিক্ষা অফিসারের, আপনাদের নয়! ২০২২-২৩ অর্থ বছরের শিশুশ্রেণীর ১০ হাজার এবং স্লিপ বাবদ ৫০ হাজার টাকা কি কাজে ব্যবহার করেছেন জানতে চাইলে এর কোন উত্তর দিতে পারেন নাই।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। এরপর ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে সরকারিকরণ হয় প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুসারে স্কুলটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০৪ জন। বর্তমানে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র পাঁচজন।
স্থানীয়দের অভিযোগ প্রধান শিক্ষক নুরবানুর খামখেয়ালিপনা, খিটখিটে মেজাজের আর শিক্ষার্থীদের সাথে রূঢ়আচরণের কারণে প্রতিবছরই কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। অথচ আশপাশের সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সন্তোষজনক।
স্থানীয় বাসিন্দা মজিদা বেগম বলেন, প্রধান শিক্ষক নুরবানু তার নিজের খেয়াল-খুশি মত স্কুল পরিচালনা করেন। শিক্ষার্থীরা লেখা-পড়ায় অমনোযোগী হলেও বিষয়টি নিয়ে তার কোন মাথা ব্যথা নেই। এমনকি পঞ্চম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী নিজের নামটাও ভালোভাবে লিখতে জানেন না। তাই এই স্কুলে বাচ্চাদের কেউ ভর্তি করতে চাচ্ছে না।
সহকারী শিক্ষক মিলি আক্তার বলেন,এখন ধানের কাজ চলতেছে এজন্য স্টুডেন্ট রা আসে না।আমরা তো খোঁজ নিচ্ছি না আসলে আমরা কী করবো বলেন?এখানকার গার্ডিয়ান রা তো সচেতন না। আমরা চাপ দিয়ে ক্লাস নিলে পরেরদিনেই তারা আর আসে না।
সহকারী শিক্ষক ফারমেনা আক্তার বলেন,আমাদের স্কুলের ব্লাকবোর্ড সহ নানান ধরনের সরঞ্জাম গুলো চুরি হয়ে যায়।আমাদের স্কুলের সরঞ্জাম গুলো নিয়ে বাড়িতে রাখা আছে।প্রতিদিন নিয়ে আসা সম্ভব না এজন্য আনা হয় না।
প্রধান শিক্ষক নুরবানু বলেন,স্কুলের জায়গায় নতুন ভবন নির্মাণ হচ্ছে। এখানে অস্থায়ীভাবে ১৫ শতাংশ জায়গা কিনে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রেখেছি।ছাত্র ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে না আসলে আমার কি করার আছে?স্কুলের বারান্দায় মাটি দেওয়ার জন্য ছাত্র ছাত্রী রা আজকে স্কুলে আসেন নাই। নতুন ভবন নির্মাণ হলে শিক্ষার্থীর সংকট থাকবে না।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) এ কে এম সাজ্জাদুজ্জামান বলেন, সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নীলফামারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ এম শাহজাহান সিদ্দিক বলেন, বিষয়গুলো খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।