গত চারটি বিশ্বকাপেই তিনটি করে ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। এবার তাদের থামতে হয়েছে দুই জয়েই। হতাশার টুর্নামেন্টের শেষটিও সুখের হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনশ ছাড়ানো সংগ্রহ নিয়েও বড় ব্যবধানে হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারানোর পর শ্রীলঙ্কাকে হারায় তারা, নয় ম্যাচে জয় এই দুটিই।
ভারতের পুনেতে বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে ৮ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার সামনে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩০৭ রানের লক্ষ্য দাঁড় করায় বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে ওই রান ২ উইকেট হারিয়ে ৩২ বল হাতে রেখেই পেরিয়ে যায় অজিরা। বিশ্বকাপের ইতিহাসেই অস্ট্রেলিয়া এর আগে এত রান তাড়ায় জয় পায়নি। এই জয়ে লিগ পর্বে তিনে থাকা নিশ্চিত করল অস্ট্রেলিয়া।
পুনেতে বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরু পায় বাংলাদেশ, দুই ওপেনারই অবশ্য সাজঘরে ফিরেছেন হতাশাকে সঙ্গী করে। শুরুটা হয় তানজিদ হাসান তামিমকে দিয়ে। দারুণ কিছু শট খেলার পর ৩৪ বলে ৩৬ রান করে সাজঘরে ফেরত যান তিনি। শন অ্যাবটের বাউন্সার বুঝতে পারেননি তানজিদ, ক্যাচ দেন বোলার অ্যাবটের হাতেই। একই রান করে জাম্পার বলে আউট হন লিটন দাস। ৫ চারে ৪৫ বলে ৩৬ রান করে জাম্পার বলে জোর না দিয়ে লং অফে তুলে মারেন লিটন। ক্যাচ দেন লাবুশেনের হাতে।
এরপর তাওহীদ হৃদয়ের সঙ্গে দারুণ এক জুটি গড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত। তাদের জুটিতে ভর করে বড় রানের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু তার শেষটাও হয় হতাশায়। ২৮তম ওভারের পঞ্চম বল স্কয়ার লেগ অঞ্চলে ঢেলে দিয়ে দৌড় শুরু করেন শান্ত ও হৃদয়। দুজন বেশ কিছুক্ষণ ধরেই রান নেওয়ার জন্য বেশ তাড়াহুড়ো করছিলেন।
ওই বলটিতে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে আউট হন শান্ত। স্কয়ার লেগ থেকে করা লাবুশেনের দারুণ থ্রোতে দ্রুত স্টাম্প ভাঙেন উইকেটরক্ষক জশ ইংলিশ। ৬ চারে ৫৭ বলে ৪৫ রান করে সাজঘরে ফিরতে হয় শান্তকে।
এরপর হৃদয়ের জুটির সঙ্গী হন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাদের জুটিতে ৪৪ রান আসে। এবারও সেই রান আউটে শেষ হয় জুটি, লাবুশেন থাকেন এখানেও। হৃদয় বল কাভারে পাঠান, এরপর রানের জন্য দৌড় শুরু করেন দুজন। কিন্তু নন স্ট্রাইক থেকে দৌড়ে আসা রিয়াদ যতক্ষণে ঝাপিয়ে দাগ ছুন, ততক্ষণে আন্ডার আর্ম থ্রোতে স্টাম্প ভেঙে দেন লাবুশেন। ১ চার ও ৩ ছক্কায় ২৮ বলে ৩২ রান করেন রিয়াদ। বিশ্বকাপের শেষ ইনিংসে রান আউট হয়ে হতাশা নিয়ে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন তিনি।
মুশফিকুর রহিমও ইনিংস টেনে নিতে পারেননি খুব বেশি দূর। ২৪ বলে ১ ছক্কায় ২১ রান করেন তিনি। হৃদয়ও ইনিংস শেষ করতে পারেননি। শুরুতে বলের চেয়ে বেশি রান করা এই ব্যাটার পরে স্ট্রাইক রেটও একশর নিচে নিয়ে আসেন। বিশ্বকাপে তার প্রথম হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস থামে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৭৯ বলে ৭৪ রান করে। স্টয়নিসের বলে লাবুশেনের হাতে ক্যাচ দেন তিনি।
শেষদিকে মেহেদী হাসান মিরাজের ২৪ বলে ২১ রানে বাংলাদেশ তিনশ ছাড়ানো সংগ্রহ পায়। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে দুটি করে উইকেট নেন শন অ্যাবট ও অ্যাডাম জাম্পা।
রান তাড়ায় নামা অস্ট্রেলিয়াকে কখনোই তেমন একটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি। যদিও বাংলাদেশ শুরুতেই উইকেট পেয়ে গিয়েছিল। তাসকিন আহমেদের অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরের ব্যাক অব দ্য লেণ্থের বল খেলতে গেলে ট্রাভিস হেডের ব্যাটের কানায় লেগে স্টাম্পে আঘাত হানে। ১১ বলে ১০ রান করে সাজঘরে ফিরতে হয় হেডকে। স্রেফ ১২ রানে প্রথম উইকেট হারায় তারা।
এরপর ডেভিড ওয়ার্নার মিচেল মার্শের সঙ্গে ১২০ রানের জুটি গড়েন। হাফ সেঞ্চুরি করার পর ওয়ার্নারকে ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান। শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৬১ বলে ৫৩ রান করা ওয়ার্নার। কিন্তু ওটুকু অবধি। তৃতীয় ওভারে খেলতে নামা মার্শকে আর আউটই করতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৩২ বলে ১৭ চার ও ৯ ছক্কায় ১৭৭ রান করে মাঠ ছাড়েন তিনি। অন্যদিকে ৬৪ বলে ৬৩ রান করে তার সঙ্গে অপরাজিত থাকেন স্টিভেন স্মিথ।