তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ইবিএ প্রকল্পের আওতাধীন মাধব ছড়া খাল পুনঃখনন করে উভয় তীরে নির্মিত বাঁধের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা। গত শনিবার দুপুরে উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নের সালদিগা গ্রামের ক্ষিরোধ দাসের ছেলে সঞ্জিত দাস ভাড়া করা এসকেভেটর দিয়ে ছড়ার তীরের বাঁধ কেটে ট্রাক্টরে মাটি নিয়ে বসত বাড়ির পুকুর ভরাট করতে দেখা গেছে।
জানা গেছে, উপজেলার মাধবছড়া খাল ভরাট হওয়ায় কয়েক বছর ধরে বর্ষায় উজানের দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউপি ও সুজানগর ইউপির ৮/১০টি গ্রামের ব্যাপক রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও কৃষিক্ষেত জলাবদ্ধতায় তলিয়ে যায়।
উক্ত খালটি পুনঃখননের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় হাকালুকি হাওর হতে ভোলারকান্দি ভায়া কামিলপুর পর্যন্ত ৫.৮০ কি:মি: পুনঃখননের প্রকল্প গ্রহণ করে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন ও উভয় তীরের বাঁধে পশুপাখির আবাসস্থল ও কৃষকের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণেরও প্রকল্প এতে সংযুক্ত রয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৬২ লাখ ২৯ হাজার ৭০৮ টাকা। টিটিএসএল-জয়েন্ট ভেঞ্চার নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়া হয় গত বছরের ২০২২ সালের ২৮ মার্চ। গত বছরের ২৫ নভেম্বর প্রধান অতিথি হিসেবে প্রকল্প কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এমপি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খালের পুনঃখনন কাজ প্রায় সমাপ্ত করলেও এর উভয় তীরের বাঁধের ড্রেসিং ও গাছের চারা রোপণের কাজ এখনও শুরু করেনি। কিন্তু এরই মাঝে স্থানীয় প্রভাবশালীরা ছড়ার তীরে পুনঃখননকৃত মাটি দিয়ে নির্মিত বাঁধ কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। এতে প্রকল্পের আসল উদ্দেশ্য ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কামিলপুর গ্রামের পশ্চিম উত্তর পাশের মাধবছড়ার নবনির্মিত বাঁধ এসকেভেটর দিয়ে কাটা চলছে। ২/৩টি ট্রাক্টরে কাটা মাটি পরিবহণ করা হচ্ছে। এসকেভেটর ও ট্রাক্টর চালক রাজু মিয়া ও ফয়সল আহমদ জানান, সুজানগর ইউনিয়নের সালদিগা গ্রামের ক্ষিরোধ দাসের ছেলে সঞ্জিত দাস তাদেরকে দিয়ে বাঁধের মাটি কাটাচ্ছেন। তিনি (সঞ্জিত দাস) বলেছেন বাঁধের মাটি কাটার জন্য তার নাকি অনুমতি রয়েছে। এখানের মাটি নিয়ে তিনি বসত বাড়ির পুকুর ভরাট করছেন।
এ ব্যাপারে সঞ্জিত দাস জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড খাল খননে অনিয়ম করেছে। তার কৃষি জমির ওপর অবৈধভাবে মাটি ফেলেছে। তার জমির ওপর ফেলা মাটিগুলোই তিনি নিয়ে যাচ্ছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, প্রকল্পটির কাজ এখনও শেষ হয়নি। খননের মাটি দিয়ে খালের উভয় তীরে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বাঁধের ড্রেসিং শেষে এর ওপর পশুপাখির আবাসস্থল ও বিশ্রাম এবং হাওরাঞ্চলের কৃষকের ছায়া প্রদানের জন্য গাছের চারা রোপন করা হবে। প্রকল্পের মধ্যে এগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কেউ যদি বাঁধ কেটে মাটি নিয়ে যায় তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।