হযরত আলী,লালমনিরহাটের প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় শশ্মানের মন্দিরে পূজা করতে বাধা দেয় ইউপি চেয়ারম্যান ফজলার রহমান খোকন ও আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন তাদেরকে প্রায় তিন ঘন্টা অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের বূড়া সাড়ডুবি এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা অবদি অবরুদ্ধ হয়ে থাকেন ওই দুই চেয়ারম্যান।ওই দুই ইউপি চেয়ারম্যান হলেন, ফকিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলার রহমান খোকন ও গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল।
জানা গেছে, ১৯৩৫ সালে ওই শশ্মানটি স্থাপিত করা হয়। হঠাৎ করে গত কয়েক মাস ধরে শশ্মানের জমিটি নিজেদের দাবী করছেন রেজাউল হক, রেজাউনুল হক সুজন, মাইদুল হক মহল, মতিউর রহমান, সাজু ইসলাম, দুলালসহ আরও অনেকে। এ নিয়ে মন্দির কমিটির সাথে তাদের বিরোধ চলে আসছে। গত শুক্রবার সকালে অভিযুক্তরা ওই শশ্মানের ঘর ও মন্দিরের মূর্তি ভাংচুর করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০/৪০ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন রতন চন্দ্র বর্মন। এ নিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। অভিযুক্তরা গড্ডিমারী ইউপি চেয়ারম্যান শ্যামলের আত্বীয় হওয়ায় হাতীবান্ধা থনার ওসি বিষয়টি তাকে অবগত করেন। ইউপি চেয়ারম্যান শ্যামল ফকির পাড়া ইউপি চেয়ারম্যান খোকনকে সাথে নিয়ে শনিবার বিকেলে ওই এলাকায় গিয়ে বিষয়টি জোড়পূর্বক আপোষ মিমাংসা করার চেষ্টা করেন। এ পর্যায়ে উত্তোজিত হয়ে শ্যামল ও খোকন চেয়ারম্যান হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে হুমকি ধামকি ও গালাগালি করেন। পরে হিন্দু সম্প্রাদয়ের লোকজন তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে ইউএনও, এএসপি, ওসি গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা নিরু বালা বলেন, প্রথমে রেজাউল হক, রেজাউনুল হক সুজন, মাইদুল হক মহল, মতিউর রহমান, সাজু ইসলাম, দুলালসহ আরও অনেকে শ্মশানের মন্দির ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করেন। এরপর এবার শ্যামল ও খোকন চেয়ারম্যান আমাদেরকে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি
দিচ্ছেন। আমাদেরকে পূজা আর্চনা করতে বাধা দেয়। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
এ বিষয়ে বুড়া সাড়ডুবি সার্বজনীন মহাশ্মশানের মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক সবুজ বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান শ্যামল ও খোকন মন্দিরে এসে পূজারিকে হুমকি দেয়। আমাদের পূজা আর্চনার সামগ্রী পা দিয়ে লাথি মেরে গুড়িয়ে দেয়। আমরা ভয়ে পূজা আর্চনা করতে পারছিনা। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
এ বিষয়ে গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামলের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কলটি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে ফকিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলার রহমান খোকন অবরুদ্ধের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমরা মন্দিরের পূজা আর্চনায় বাধা দেইনি।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বাবু দিলীপ কুমার সিংহ বলেন, জমি নিয়ে ঝামেলা তা আইন অনুয়াযী সমাধান হবে। কিন্তু তারা হিন্দু সম্প্রদায়কে গালিগালাজ করছে তা বোধ গম্য নয়। আর তারাও চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করা ঠিক করেনি। কিন্তু সবার উপস্থিতি তারা যে গালিগালাজ হুমকি ধামকি দিয়েছেন তা মেনে নেওয়া যায় না।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহা আলম বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে আমরা গিয়েছিলাম। মঙ্গলবার ইউএনও অফিসে বিষয়টি নিয়ে বসা হবে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজির হোসেন বলেন, মন্দির কমিটিকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গগত- গড্ডিমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল সিন্দুর্না ইউপি নির্বাচনে হিন্দু সম্প্রদায়কে নিয়ে কুটক্তি ও হুমকি ধামকি দেয়। তা নিয়ে পুরো দেশ জুড়ে চলে আলোচনা সমালোচনা ঝড়। শুধু তাই নয় এই ইউপি চেয়ারম্যান পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখল করে বৈরালী হোটেল নামে একটি রেস্তেরা পরিচালনা করে আসছেন।