তাসলিমুল হাসান সিয়াম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি: মৃত্যুর পর ধর্ম ভেদে মানুষের শেষ বিদায় হয় বিভিন্ন নিয়মে । মুসলিম ধর্ম অনুযায়ী একজন মানুষ মারা গেলে নির্দিষ্ট নিয়মে তাকে মাটির নিচে দাফন করা হয় । মাটিতে দাফনের এই প্রথাটি মুসলিম ধর্মে যেমন সর্বজন স্বীকৃত তেমনি ধর্মগ্রন্থেও এর প্রমাণ পাওয়া যায় । কিন্তু এর ব্যাতিক্রম দেখা গেছে আব্দুল কাদের নামে ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের কান্ডে । মৃত্যুর আট বছর পূর্বেই তিনি নিজের কবর খুঁড়ে পাকা করেছেন ।
ব্যতিক্রমী এই ঘটনাটি ঘটেছে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ঘোড়াবান্দা গ্রামে । ঐ গ্রামের আব্দুল কাদের (৭০) নামে এক ব্যক্তি নিজের মৃত্যুর পূর্বেই তার কবর খুঁড়ে পাকা করে রেখেছেন । সরেজমিনে ঐ এলাকায় গিয়ে দেখা যায় নিজ বসতবাড়ির ঠিক পাশেই সুসজ্জিত ফুল বাগানের এক কোনে ইট , সিমেন্ট ও বালুর সাহায্যে নির্মিত পাকা করা কবরটি। এর উপরে একটি টিনের চালা রয়েছে ।আর এর ঠিক পাশেই টাইলসে মোড়ানো আরেকটি কবর ।
জানা যায় , ২০০১ সালে সেটেলমেন্ট অফিসের কানুনগো পদ থেকে অবসর নিয়ে প্রায় আট বছর পূর্বে আব্দুল কাদের প্রথমে নিজের জন্য কবর খুঁড়ে পাকা করে রাখেন কিন্তু তার স্ত্রীর মৃত্যু হলে ঐ কবরেই তাকে দাফন করা হয় এবং পরবর্তীতে স্ত্রীর কবরের পাশেই গত চার বছর আগে আরেকটি নতুন কবর খুঁড়ে রাখা হয় ।
এদিকে আব্দুল কাদের প্রধানের এমন কর্মকাণ্ডে এলাকায় মাঝে মাঝে সমালোচনা হয় । রেজাউল মিয়া নামে তার এক প্রতিবেশী জানান, কবর পাকা করার বিষয়টিতে এলাকাবাসী ঘোর আপত্তি জানিয়েছিল কিন্তু তিনি কারও মতের তোয়াক্কা করেনি ।
এ বিষয়ে আব্দুল কাদেরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষের মৃত্যুর পর তো তার রুহের বিচার হয় কিংবা তার রুহ শাস্তি বা শান্তি পায় । মানুষকে কবর দেওয়া যেন তা থেকে পচে যেন কোন দুর্গন্ধ বের না হয় । সাধারণত মাটির কবরগুলোর ভিতরে পানি ঢুকলে তা ভেঙে যাওয়ায় সম্ভাবনা থাকে । আমার পরিবারের তিন ছেলে ও এক মেয়ের সবাই দেশের বাইরে থাকে। মৃত্যুর পর আমার কবর মেরামতের কোন লোক থাকবে না এমন চিন্তা থেকেই কবর পাকা করে রেখেছি ।
গাইবান্ধা ইমাম ওলামা পরিষদ গাইবান্ধা পৌর শাখার সভাপতি মাওলানা মানসুর আলম খান বলেন , সঠিক নিয়মে মৃত ব্যক্তির লাশ কবরের দাফন করা সুন্নাত । কবরে লাশ দাফনে বেশ কয়েকটি নিয়ম প্রচলিত আছে কিন্তু কবর পাকা করার হাদীস কোথাও পাওয়া যায়নি সুতরাং এটি ইসলামী শরিয়াহ সম্মত হবে না।