তাসলিমুল হাসান সিয়াম,গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধায় ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি ব্রিজের নিচে ময়লা আবর্জনার মধ্যে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন ষাটোর্ধ্ব রমিছা বেগম। বয়সের ভারে এখন চোখেও দেখেন না তেমন। আপনজন বলতে কেউ না থাকায় বাধ্য হয়েই এখানে থাকতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার মাথা গোঁজার মতো একটি ঘর জোটেনি তার কপালে। এখন ব্রিজের নিচে ঝুপড়ি ঘরে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন বৃদ্ধা রমিছা।
স্থানীয়রা জানান, পৌর শহরের বানিয়ারজান এলাকায় অন্যের জমিতে এক সময় বসবাস করতেন রমিছা ও তার পরিবার। স্বামী মৎস্য সরকারের হঠাৎ মৃত্যু হলে অভাবের দায়ে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে গাইবান্ধা শহরের পুরানো ব্রিজের নিচে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করেন রমিছা। সেখান থেকেই বিয়ে দেন মেয়েকে। কিন্তু সন্তান প্রসবের সময় মারা যান তার একমাত্র মেয়েটি। পরে নাতিকে নিয়ে বড় করেন তিনি। নাতির বয়স যখন ৪ বছর, ব্রিজের নিচে পাগলা কুকুরের কামড়ে আহত হয়। চিকিৎসা করাতে না পারায় একমাত্র নাতিও মারা যায়।
সব শোক মাথায় নিয়ে সেই ব্রিজের নিচেই মৃত্যুর প্রহর গুনছেন বৃদ্ধা রমিছা বেগম। শহরের প্রাণকেন্দ্র ও জনবহুল জায়গায় দীর্ঘদিন থেকে মানবেতর জীবনযাপন করলেও, তাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি কেউ।
বৃদ্ধা রমিছা বেগম জানান, বহুবার সরকারিভাবে আশ্রয়ের ঠিকানা ও সহায়তার জন্য বিভিন্ন জনের দ্বারস্থ হলেও তদবির করার লোক না থাকায় কোন সহায়তা পাননি।
স্থানীয় বাসিন্দা মিলন মিয়া জানান, রমিছা বেগম দীর্ঘদিন থেকে এভাবে ময়লা আবর্জনার মধ্য ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে বসবাস করলেও সরকারিভাবে তার কেউ খোঁজ নেয়নি।
পুরানো বাজারের ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এমন অসহায় মানুষ আর কেউ আছে কিনা আমার জানা নেই। বাজারে হাত পেতে কোনো রকমে তার দিন চলে। তিনি ব্রিজের নিচে যেখানে থাকেন সে পরিবেশে কোনো মানুষ থাকতে পারে না।’
স্থানীয় খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারিভাবে আশ্রয়হীনদের জন্য ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে রমিছার তদবির করার লোক না থাকায় তার ভাগ্যে কোনো ঘর জোটেনি। স্বামী মারা যাওয়ার পরও সরকারি কোনো কর্মসূচির ভাতা পান না তিনি।’
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফজলুল হক জানান, আমি কিছু দিন আগে একটি টেলিভিশন রিপোর্টের মাধ্যমে রমিছার দুর্দশার খবর শুনতে পাই । আমরা ঐ বৃদ্ধাকে সরকারি শিশু পরিবার বালিকায় নিবাসী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছি।