আরিফ শেখ, রংপুর
রংপুরের তারাগঞ্জ বাজার হরিজন কলোনীতে ২ মাদকাগ্রস্থ বাসফরের সংঘাতে প্রাণ গেল বিজয় বাসফর (২০) নামে এক যুবককে। সে ওই কলোনীর মালুয়া রাম (ডোঙ্গা) বাসফরের ছেলে ।
শনিবার (২১ অক্টোবর) রাত ১১.১৫ মিনিটে হরিজন কলোনীতে সবাই যখন পূজা মন্ডপে ব্যস্ত পূজা-অর্চনা করতে তখন জগদীশ বাসফরের ছেলে মানিক বাসফর (৩০) তারই চাচাত ভাই বিজয়ের গলায় ধারালো ছুরি দিয়ে খাদ্যনালীতে আঘাত করে । এতে সাথে সাথেই বিজয় বারান্দার গ্রিল ধরে হেলে পরে যায় । গলা দিয়ে পানির নলের মত রক্ত স্রোত বইতে থাকে ও গ্রিল ও বারান্দার ওয়াল ভিজিয়ে ফেলে রক্তে । অবস্হা বেগতিক দেখে ধারালো ছুরিটি নিয়ে সটকে পরে মানিক । স্বজনরা বিজয়কে উদ্ধার করে দ্রুত রংপুর মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে রাত্রি ১২.৩০ মিনিটে ।
ঘটনাস্থল থেকে জানা যায় , মাদক সেবন করে দুই ভাইয়ের রক্তারক্তি সংঘাতের দুই ঘণ্টা আগেও একবার সংঘাত হয়েছিল । এ সময় পূজা মণ্ডপে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা থানায় খবর দিলে রাত ৯টায় এ এস আই সাইফুল ও এ এস আই শাহান শাহ পালাক্রমে এসে দুই জনের ঝগড়া মিটিয়ে ভেতরে পাঠিয়ে দেয় । একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় , ওই সময় মদ্যপ বিজয় চিৎকার করে বলছিল, “মানিক মাদক বিক্রি করে , সে মাদক ব্যবসায়ী ।”
হরিজন কলোনীর একাধিক ব্যক্তি জানায় , তাদের ঝগড়া মিটিয়ে দিয়ে আমরা বাড়ির ভেতরে পাঠাই। তাদের মধ্যে পূর্বে কোন সমস্যা ছিল না । মাদক সেবন করে তারা বেসামাল হয়ে গিয়েছিল । তাই বাপ-চাচাদের কোন নিষেধই মানছিল না । প্রশাসন এসে ওদের নিশ্চুপ করে দিয়ে যায় । অতঃপর ভেতরে আবার তাদের মাদক বিক্রির বিষয় নিয়েই ঝগড়া লাগে ও মানিক ঘর থেকে ধারালো ছুরিটি এনে গলায় স্টেপ করে ।
এদিকে তারাগঞ্জ থানায় বিজয়ের বাবা মালুয়া রাম রবিবার দুপুর ২.১৫ মিনিটে একটি এজাহারে দাখিল করেন । সেখানে নতুন ঘটনার অবতারণা করা হয় । পূর্ব শত্রুতার জের দেখিয়ে হত্যার ১ নং আসামি করা হয় মানিক বাসফরকে। হুকুমদাতা হিসেবে ২ নং আসামি করা হয় মানিকের স্ত্রী পারুল রাণীকে । উল্লেখ করা হয় বিজয় পারুল রানীর নামে বদনাম রটিয়েছে বলে পারুল ক্ষুদ্ধ হয়ে মানিককে হত্যা করার নির্দেশ দেয় । তাই মানিক তার চাচাত ভাই বিজয়কে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরি মেরেছে শনিবার রাত ১১.১৫ মিনিটে । কিন্তু এজাহারের কোথাও উল্লেখ নেই তার ঘন্টা দুয়েক আগের ঝগড়ার কথা । কি নিয়ে সেই ঝগড়া হয়েছে তাও উল্লেখ করা হয়নি ।
তারাগঞ্জ বাজার হরিজন সম্প্রদায়ের পূজা মন্ডপের সভাপতি বাবু লাল বাসফর জানান, মাদক নিয়ে আমি অনেক বাধানিষেধ আরোপ করেছি । কিন্তু কেউ কথা শোনে না । এই মাদকের কারণে আজকে আমরা ফুটফুটে একটি সন্তান হারালাম । আজকে যদি মাদক না খেত তাহলে ওরা এভাবে বেসামালও হত না ,কেউ মারাও যেত না ।বিজয় হত্যার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি ওই সময় বাড়ির বাইরে ছিলাম । ভেতরে যেয়ে দেখি বিজয়ের গলা দিয়ে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে । দ্রুত রংপুর মেডিকেল নিয়ে যাই। সেখানে ভর্তির সাথেসাথেই ডাক্তার তাকে মৃত বলে জানান ।
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ জানান, বিজয় হত্যায় তার পিতা বাদী হয়ে থানায় এজাহার দিয়েছে ৩০২/১১৪/৩৪ ধারায়। মামলা নং ১০/১৭৩ । হত্যার মূল কারণ তদন্ত করে বের করা হবে। মাদক নির্মূলে আমরা বদ্ধ পরিকর । খুব দ্রুতই তারাগঞ্জ থানাকে আমরা মাদক মুক্ত করে একটি আদর্শ থানায় রূপান্তর করব । এ ব্যাপারে তিনি অভিভাবক , সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতা কামনা করেছেন ।