এ,এম স্বপন জাহান
মধ্যনগর উপজেলা প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে লাইসেন্স বিহীন কথিত আদম ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন বিদেশগামীরা। সোনার হরিণ ধরতে গিয়ে প্রাণও হারাচ্ছেন কেউ কেউ। নিঃস্ব হয়ে পরিবারের সদস্যরা ভাসছে অথৈ সাগরে।পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য শেষ সম্বল টুকুও হারাতে হচ্ছে বিদেশ নামক সোনার হরিণ ধরতে। কারও কারও ভাগ্যের চাকা ঘুরলেও নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকেই।
সম্প্রতি সরেজমিনে এ সকল পরিবারের দু:খ দুর্দশার কথা জানতে এবং তাদের সাথে কথা বলতে ‘মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের ০৩ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে এই ওয়ার্ডের বেশ কয়েকজন কমিশন ভিত্তিক আদম ব্যাপারী বা দালালের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। যারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের বিদেশে নিয়ে যাওয়ার নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
এসব আদম ব্যাপারীদের মধ্যে মঞ্জু দালাল ও তার ভাই বিল্লাল হোসেন অন্যতম। প্রথমে নামিদামি কোম্পানী, আকর্ষণীয় বেতন ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথা বলে গ্রামের সহজ-সরল কর্মহীন যুবকদের ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়াই তাদের মূল টার্গেট। টার্গেটকৃত ব্যাক্তিরা তাদের ফাঁদে পড়ে উন্নত জীবনের আশায় বিদেশ পাড়ি জমায়। আর সেখানেই পৌঁছানোর পর থেকেই দালালদের আসল রুপ বেরিয়ে আসতে শুরু করে।
তারা সেখানে নিয়ে এসকল যুবকদের সাপ্লাই কোম্পানির নামে অন্য দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। পরে সেই দালালদের চাহিদা অনুযায়ী যারা টাকা দিতে পারে কেবল মাত্র তারাই চাকুরী পায়। আর যারা টাকা দিতে না পারে তারা অর্ধাহারে অনাহারে অসহনীয় মানবেতর জীবন-যাপন করে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়।
আবার কেউ কেউ পালিয়ে গিয়ে প্রবাসে কারাজীবন বরণ করে নিচ্ছে। দেশে এসে আদম ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা ফেরত চেয়ে উল্টো তাদের হামলা-মামলার স্বীকার হতে হচ্ছে। অর্থ উপার্জনের আশায় দালালদের ফাঁদে পা দিয়ে চরম মাশুল গুনতে হচ্ছে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য যাওয়া সহজ সরল যুবক ও পরিবারদের।
খোজ নিয়ে জানা যায়, আদম ব্যাপারী মঞ্জুর গ্রামের বাড়ী মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের গড়াকাটা গ্রামে।নিজেই দীর্ঘদিন প্রবাশে থাকার কারনে দেশে এসে নিজের ভাই বিল্লাল হোসেন কে নিয়ে মাঠে নেমে পরে আদম ব্যবসার জন্য।যেই কথা সেই কাজ সহজ সরল মানুষদের উচ্চ বেতনে চাকুরী দেওয়ার নাম করে সৌদিআরব সহ বিভিন্ন দেশে লোক পাঠিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।নামি-দামি কোম্পানি ও মোটা অংকের বেতনের কথা বলে এলাকার সহজ সরল নিরিহ যুবক ও তাদের পরিবারকে টার্গেট করে সাপ্লাই ও জাল ভিসায় পাঠিয়ে সর্ব শান্ত করে দিচ্ছে অনেক পরিবার কে।
স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, আদম ব্যবসায়ী মঞ্জু ও তার ভাই বিল্লাল সহ একই গ্রামের আরও কয়েকজন দালাল অসহায় ওই সকল যুবকদের উচ্চ বেতনের লোভ দেখিয়ে সৌদি আরব পাঠান হোটেল, ক্লিনার ভিসাসহ বিভিন্ন কোম্পানির ভিসা বলে। সেখানে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকে। উল্টো তাদের খাওন-খরচের জন্য দেশ থেকে টাকা পাঠাতে বাধ্য হয় পরিবারের লোকজন।
ভুক্তভোগী তাজুল ইসলাম বলেন,আমাকে সৌদি আরবে ভালো কোম্পানিতে চাকরি দেয়ার কথা বলে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা নেন মঞ্জু ও তার ভাই বিল্লাল হোসেন। ১০ মাস আগে ভিসা পেয়ে সৌদি আরবে যাওয়ার পর আমি জানতে পারি আমাকে যে ভিসায় আনা হয়েছে সে কথা মত কাজ দিচ্ছে না তাদের কথা মত ৯ মাসের মত কাজ করেও কোন বেতন পায়নি।আমি না খেয়ে কত দিন থাকবো?আমারে এরা জিন্দা মরা কইরা দিছে,আমাকে গরুর মত ছুলাইয়া ফালাইছে ।আমাকে আকামা দেই নি।আমি এখন পলাতক। মনে হচ্ছে বেশি দিন বাঁচবো না।এরা আমাকে নি:শ্ব করে দিছে।
আদম দালালের খপ্পরে পড়ে কপাল পুড়েছে এই গ্রামের অনেক সাধারণ মানুষের। তাদের মধ্যে রবিউল আওয়াল,সুমন মিয়া,দুদু মিয়া,রাব্বি সহ বেশকয়েকটি পরিবার এই দালালের প্রতারণার স্বীকার।
ভুক্তভোগী রবিউল আওয়াল বলেন, আমাকে হাসপাতাল ক্লিনারের ভিসার কথা বলে ৪ লক্ষ ১০ হাজারের মত টাকা আমার কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে।সৌদিআরবে এসে বুঝতে পারি আমার সাথে এরা প্রতারণা করেছে।এখানে আশার পর না খেয়ে না ঘুমিয়ে কোন রকম দিন পার করেছি।আমার পরিবারের লোক দালালের উপর চাপ প্রয়োগ করলে ৮০ হাজার টাকার মত ফেরত দিয়েছে।আমি এখন আমার বোন জামাইয়ের এখানে আছি।আমি এদের বিচার চাই।
ভুক্তভোগী সৌদিফেরত রাব্বির সাথে কথা বলে জানা যায়,আমার কাছ থেকে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে সৌদি আরবে নিয়ে যায়।সেখানে গিয়ে জানতে পারি আমাকে যে কথা বলে এনেছে তার পুরোটাই উল্টো।আমার কাজ নেই, খাওয়া নেই নির্ঘুম রাত্রি যাপন করতে হয়েছে। আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে উল্টো তারা আমাকে হুমকি দামকি দিয়ে আসছে। কাজ না দেওয়াতে না খেয়ে কোন রকমে প্রাণে বেঁচে দেশে ফিরে এসেছি। স্থানীয় ভাবে গন্যমান্য ব্যক্তি বর্গের উপস্থিতিতে মিমাংসার কথা বললেও গ্রাম্য সালিশে তো বসছেই না উল্টো গড়িমসি করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন আমাকে এক কাজের কথা বলে অন্য কাজ দিয়েছে যা আমি দেশে থাকতেও করিনি।এখন আমি কি করবো।বেশি কিছু বলতে পারছিনা যদি আবার আমাকে এইখানে নির্যাতন করে।
এরকম আরও অনেকের সাথে এরকম প্রতারণা করেছে বলে জানা যায়।
একাদিক গ্রামবাসীর ভাষ্যমতে মঞ্জু ও তার ভাই বিল্লাল মিলে এই এলাকার অনেক পরিবারকে একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে।প্রতিদিনই এদের নামে বিচার সালিশ হচ্ছে।
আদম ব্যাপারী মঞ্জুর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়ার পরেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি।তবে বিল্লাল হোসেন ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মানহানীর মামলা করার হুমকি প্রদান করেন।
মধ্যনগর থানার অফিসার ইনচার্জ এমরান হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যাস্ত থাকায় তার ফোনে এসআই রফিজুল মিয়া জানান,এই বিষয়ে আমরা জানি না,কেউ আমাদের কে বলেনি তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।