স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোরঃ
আগামীকাল শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সকালে ষষ্ঠীদি কল্পারম্ভে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা।
আজ বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে শহরের হরিসভা মন্দিরে শারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষে যশোর জেলা পূজা পরিষদ সাংবাদিক সম্মেলন করেছে।
পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাশ রতনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যশোর জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ।
বক্তব্যে তপন কুমার ঘোষ বলেন, বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে নানা ধর্মীয় মাঙ্গলিক আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গত শনিবার (১৪ অক্টোবর) মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের শুরু হয়েছে। আগামীকাল ২০ অক্টোবর (শুক্রবার) সকালে ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস এবং ঐ দিন বিকেলে পূজারম্ভ। ২১ অক্টোবর সকালে মহাসপ্তমী, ২২ অক্টোবর সকালে মহাঅষ্টমী ও সন্ধিপুজা রাত ৮টা ৬ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৫৪ মিনিট পর্যন্ত, ২৩ অক্টোবর সকালে মহানবমী পূজা কল্পারম্ভ এবং ২৪ অক্টোবর সকালে মহাদশমী কল্পারম্ভ- পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন সকাল ৯টা ৪৯ মিনিটের মধ্যে।
শাস্ত্রমতে এ বছর দেবীর আগমন ঘটকে (ঘোড়া); এবং কৈলাসে ফিরে যাবেনও ঘটকে। দেবীর ঘোড়ায় যাতায়াতের ফল হল ‘ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে’ অর্থাৎ সবকিছু ছত্রভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। নানা গোলমাল, দাঙ্গাহাঙ্গামা, ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট দ্বারা বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা ঘটে থাকে। ঘোড়া ছটফটে প্রাণী। তাই সে যখন যায়, সব কিছু ছত্রভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এতে ফসল নষ্ট হওয়ার এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা ও খরা দেখা দিতে পারে। মহামারি ও রাজনৈতিক অস্থিরতাও হতে পারে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, এ বছর যশোর জেলার আট উপজেলা ও পৌর এলাকায় ৭৩২ টি মন্দির এবং মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। যা গত বছরের চেয়ে ৯টি বেশি। এরমধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ১৬৭টি মন্দির ও মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে পৌরসভায় পূজা হবে ৫০টি, অভয়নগর উপজেলায় পূজা হবে ১৩৪টি, এরমধ্যে পৌরসভায় ২০টি, মণিরামপুরে পূজা হবে ৯৯টি, এরমধ্যে পৌরসভায় ৯টি, কেশবপুরে পূজা হবে ৯৮টি, এরমধ্যে পৌরসভায় ৯টি, বাঘারপাড়ায় পূজা হবে ৯৭টি, এরমধ্যে পৌরসভায় ৪টি, ঝিকরগাছায় পূজা হবে ৫৬টি, এরমধ্যে পৌরসভায় ৯টি, চৌগাছায় পূজা হবে ৪৯টি, এর মধ্যে পৌরসভায় সাতটি ও শার্শায় পূজা হবে ৩২টি এরমধ্যে পৌরসভায় চারটি।
পূজা উদযাপনকে ঘিরে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে সন্তুষ্ট প্রকাশ করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের যশোর জেলা সভাপতি দীপংকর দাশ রতন বলেন, পূজা মণ্ডপগুলোতে প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। রাত পোহালেই আগামীকাল শুক্রবার ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে, ২৪ অক্টোবর (মঙ্গলবার) বিসর্জনের মধ্যদিয়ে পুজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। আমরা আশা করছি সারাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এবারের পূজা উদযাপন করতে পারবে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে সরকারের পক্ষ থেকে পূজা নির্বিঘ্নে করতে সচেতনভাবে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছি না। তবে সুযোগ সন্ধানীরা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আমরাও যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছি। তিন শিফটে ভাগ হয়ে প্রতিটি মণ্ডপে আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা দায়িত্ব পালন করবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন যশোর জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি দুলাল সমাদ্দার, অ্যাডভোকেট প্রশান্ত দেবনাথ, যুগ্মসম্পাদক রতন আচার্য্য, প্রচার সম্পাদক প্রশান্ত সরকার, সহ প্রচার সম্পাদক বিকাশ চন্দ্র ঘোষ বাপী, দপ্তর সম্পাদক অজয় সিংহ রায়, সহদপ্তর সম্পাদক দুর্গা দেবনাথ, জনসংযোগ বিষয়ক সম্পাদক উৎপল ঘোষ, সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাজেলা পতি গোবিন্দ ঘোষ, সহসভাপতি গৌতম কর্মকার, আমল ঘোষ প্রমুখ।