স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোরঃ
আকাশে ভেসে বেড়ানো শুভ্রমেঘ, নদীতীরে কিংবা খালপাড়ে মৃদুমন্দ বাতাসে দোলায়িত শুভ্র কাশফুল, মেঘহীন আকাশে জোছনার সৌন্দর্য আর ভোরে হেসে ওঠা শিশিরভেজা শিউলি-বকুলের সুমধুর ঘ্রানে দোলায়িত মনে জানান দেয় শরত কালের।আর এই
শরতকালেই অনুষ্ঠিত হয় সনাতন ধর্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা । আসন্ন শারদীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে গত কয়েক মাস যাবত সারাদেশে চলছে প্রতিমা তৈরির বিশাল কর্মযজ্ঞ!
মহোৎসব উপলক্ষে সারাদেশের ন্যায় যশোরেও প্রতিমা শিল্পী বা ভাষ্কররা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে কাঠ, বাঁশ,বিছালি ও সুতলী দিয়ে ৮ কাঠামোতে মাটি দেওয়া ও দো-মাটি দেওয়ার কাজ শেষ করেছেন। এখন চলছে প্রতিমায় রং দেয়া, সাজসজ্জাসহ ডেকারেশনের কাজ।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ জানান,যশোর জেলায় ৭৩২ টি পূজা মন্ডপে এবছর শারদীয় দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে যশোর সদরে ১৬৭, কেশবপুরে ৯৮, মণিরামপুরে ৯৯, ঝিকরগাছায় ৫৬, শার্শায় ৩২, অভয়নগরে ১৩৪, চৌগাছায় ৪৯ ও বাঘারপাড়ায় ৯৭টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।গত বছরের চেয়ে এবার ২টি পূজা বেশি হচ্ছে।
তবে যশোর জেলার হিন্দু অধ্যুষিত অভয়নগর,মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত ৯৬ গ্রামের প্রাণকেন্দ্র মশিয়াহাটীতে আঞ্চলিক পূজা উদযাপন পরিষদ ঐ অঞ্চলের শারদীয় দূর্গোৎসবের শতবর্ষ উপলক্ষে নিয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। একশত পৌরানিক কাহিনীর আলোকে ৩ শত১ টি প্রতিমা নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে এ বছরের দূর্গোৎসব। গীতা, রামায়ণ আর মহাভারতের ১শত ১টি পৌরানিক কাহিনী অবলম্বনে ৩শত ১ টি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে ।গত ৬ মাস যাবত দিনরাত পরিশ্রম করে ১৫ জন ভাষ্কর (প্রতিমা তৈরির কারিগর) প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করছেন। এখন শেষ মূহুর্তে রঙের আঁচড় দিয়ে দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা কারিগররা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকল মূর্তি মশিয়াহাটি আঞ্চলিক দুর্গাপূজা মন্দিরের ভেতরসহ মশিয়াহাটী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ জুড়ে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। পাশ্ববর্তী মশিয়াহাটী ডিগ্রি কলেজ মাঠে তৈরি করা হচ্ছে বিশাল প্যান্ডেল। যেখানে অতিথি ও দর্শনার্থীদের স্বাগত জানানোসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।পাঁচদিন ব্যাপি চলমান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় শিল্পীদের পাশাপাশি দেশের ও পার্শ্ববর্তী ভারতের শিল্পীদের পরিবেশনা থাকবে।
এবছর ২০ অক্টোবর (৪ঠা কার্ত্তিক) শুক্রবার মহাষষ্ঠী ও বোধনের মধ্য দিয়ে পূজা শুরু হবে এবং ২৪ অক্টোবর ( ৮ কার্ত্তিক) মঙ্গলবার বিজয়া দশমীর পূজা শেষে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে মহা আয়োজন শেষ হবে।
দুর্গা পূজা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিকসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে গতকাল বুধবার জেলা কালেক্টরেট সভা কক্ষে যশোর জেলা প্রশাসনের এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জানানো হয়,জেলার পূজা মন্ডপগুলোয় ২ হাজার পুলিশ ও ২২৮৬ আনসার সদস্য এবং ডিএসবি দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি মন্ডপে স্থাপন করা হচ্ছে সিসি ক্যামেরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবীরা দায়িত্ব পালন করবেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে পূজা উদ্যাপন করতে হবে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পাশাপাশি মন্ডপগুলোতে অগ্নিকান্ডের প্রাথমিক সুরক্ষার জন্য বালি ও পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। ডেঙ্গু থেকে সতর্ক থাকতে মন্ডপের আশপাশের ড্রেন পরিস্কার রাখতে হবে। সম্প্রীতি টিম করতে হবে। চারটি ক্যাটাগরিতে মন্ডপকে পুরস্কার দেয়া হবে। নামাজ ও আযানের সময় গান বাজনা বন্ধ রাখতে হবে। প্রয়োজনে ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন দিতে হবে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলায় দুর্গা পূজায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন ইউনিফর্ম পরা ও সাদা পোশাকের ২ হাজার পুলিশ। পাশাপাশি থাকবে ডিএসবি ও আনসার। প্রত্যেক ইউনিয়নে একজন বিট অফিসার ও সহকারী বিট অফিসার দায়িত্ব পালন করবে।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, মন্ডপের আশপাশের ড্রেন পরিস্কার, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য জেনারেটর ও আইপিএসএ’র ব্যবস্থা রাখতে হবে। পাশাপাশি ট্যাগ অফিসার নিয়োগ ও সম্প্রীতি টিম গঠন করতে হবে। নান্দনিকতা, পরিচ্ছন্নতা, প্রসাদ বিতরণ ও সব মানুষের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি-এই চারটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেয়া হবে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংঙ্কর দাস রতন বলেন, পূজার প্রস্তুতি চলছে। প্রতিবারের মতো জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সুশীল সমাজকে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা অনুষ্ঠান করা হবে।