তাসলিমুল হাসান সিয়াম,গাইবান্ধা প্রতিনিধি:

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের খোর্দ্দা গ্রামের বুড়াইল নদীর ওপর নির্মিত কাঠের সাঁকোটি ছিল অর্ধলাখ মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। বুড়াইল নদীর পশ্চিমে নিজামখাঁ, ঘগোয়া, চাঁচিয়া, রংপুরের তালেরহাট, তাম্বুলপুর, পীরগাছা ও পূর্বে চরখোর্দ্দা, চর লাটশালা, চর তারাপুরসহ কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার লোকজন পারাপার হতেন এ সাঁকো দিয়ে। তবে টানা বৃষ্টি, পানির স্রোত ও কচুরিপানার চাপে ভেঙে নদীতে পড়েছে সাঁকোটি। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন বুড়াইল নদীর দুপাড়ের বাসিন্দারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় দুই যুগ ধরে ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে পারাপার হতেন বুড়াইল নদী দুই পাড়ের বাসিন্দারা। সাতবছর আগে এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে বাঁশ-কাঠ সংগ্রহ করে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন নদী পারাপারের জন্য। পরে যোগাযোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর আর্থিক সহযোগিতায় তিনবছর আগে বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে ওইস্থানে একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এখন সেই সেতুটি ভেঙে নদীতে পড়ে গেছে। এতে চরম ভোগান্তি পড়েছেন স্থানীয়রা।

এছাড়া এ সাঁকোর পাশেই দেশের সর্ববৃহৎ সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ‘তিস্তা সোলার লিমিটেড’ অবস্থিত। প্রতিদিন এখানকার উৎপাদিত ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। এখানে রয়েছে আলীবাবা থিম পার্ক। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আলীবাবা থিম পার্কের দর্শনার্থীরাও পড়েছেন বিপাকে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে জরুরি প্রয়োজনে দুপাড়ের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডিঙ্গি নৌকায় পারাপার হচ্ছেন। আবার অনেকেই ২৫ কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করছেন।

মিজানুর রহমান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই স্থানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে স্থানীয়রা। স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমরা অবহেলিত। কোনো রাস্তা পাকা হয়নি। হয়নি কোনো সেতু নির্মাণ। তাই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানও বাড়েনি।

খোর্দ্দা গ্রামের বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন, একটি সেতুর অভাবে আমাদের এলাকায় কোনো উন্নয়ন হয়নি। সবাই শুধু ভোট নিয়ে যায়, কেউ উন্নয়ন করে না। একটি সেতু নির্মাণসহ খোর্দ্দা ও লাটশালা গ্রামের রাস্তা পাকা করার দাবি জানাচ্ছি।

আরিফুল ইসলাম নামের এক কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী বলেন, কাঠের সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হতে হচ্ছে। দীর্ঘ সময় নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। একটা সেতু হলে চরাঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের দুঃখ ঘুচবে।

ইউপি সদস্য মো. শাহ আলম মিয়া বলেন, প্রতি বছর এ সাঁকো মেরামত করতে অনেক টাকা ব্যয় হয়। এলাকাবাসী, ইউপি সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় এমপির আর্থিক সহযোগিতায় এ সাঁকোটি মেরামত করা হয়। এই স্থানে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা দরকার।

এ বিষয়ে তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম লেবু বলেন, বুড়াইল নদীতে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি শীঘ্রই সেতু নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া যাবে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. শামসুল আরেফিন খান বলেন, ওই স্থানে একটি সেতু নির্মাণে অনুমোদনের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পের অনুমোদন পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version