সম্ভাব্য পোলিং এজেন্টদের তালিকা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়ার পর যদি তাদের গ্রেফতার করা হয়, তাহলে বুঝবো সেটি বিশেষ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করবো এটি (গ্রেফতার) হবে না। আমরা বারবার সরকারকে এটা জানাবো, যদি তাদের গ্রেফতার করতে হয় ছয় মাস আগেই করেন। আর যদি করতে হয় তো নির্বাচনের পরে। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিত হবে না।’
বুধবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর নির্বাচন ভবনে ‘অবাধ ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টদের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালা হচ্ছে। নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যম ব্যক্তিসহ বিশিষ্টজনেরা।
ভার্চুয়াল মাধ্যমে ৬৪ জেলায় নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের মাধ্যমের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা এই কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন। ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট নিশ্চিত করা ও তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে জোর দিয়েছেন বক্তারা। একই সঙ্গে নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনেরও তাগিদ দেন তারা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, সবসময়ই ভোট কারচুপির অভিযোগ ওঠে। এজেন্টরা সচেষ্ট হলে অনিয়মের মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। সকলের পরামর্শ নিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই আমাদের উদ্দেশ্য।
সাবেক নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলেন, ভোটের পরিবেশ ঠিকঠাক করে দিতে পারলে এজেন্ট আসবে। আর এটাই এই মুহূর্তে ইসির জন্য চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেন তারা। বলেন, অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে শাস্তির উদাহরণ তৈরি করলে বাকিরাও সতর্ক হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সৎভাবে ভোট করতে চাচ্ছি। কোনো দলের পক্ষে পক্ষপাতিত্ব করতে আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করিনি। সেজন্য একটা হতে একটা তালিকা যদি আগে দেওয়া হয়, এর পরে থেকে যদি পটাপট গ্রেফতার হতে থাকে। দেখা গেল ১০ জন বাকি আছে ১৪০ জনই গ্রেফতার হয়ে গেলো। একটা বিষয় মিন করে যে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে বিশেষ একটা উদ্দেশ্যে। তবে আমরা আশা করবো এই ক্ষেত্র কখনোই হবে না। আমরা সরকারকে এটা জানাবো যদি তাদেরকে গ্রেফতার করতে হয় ছয় মাস আগেই সবাইকে গ্রেফতার করে ফেলেন। আর যদি না করেন তবে নির্বাচনের পরে গ্রেফতার করে ফেলেন। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ঠিক হবে না। এতে আমরা কলঙ্কিত হবো বলে মনে করি। পোলিং এজেন্ট না থাকলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। একজন শক্তিশালী প্রার্থী দুর্বল পোলিং এজেন্টদের বের করে দেন।’
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেছেন, আমরা কী এমন করেছি যে আমাদের ওপর আস্থা আনা যাচ্ছে না। অনেককে বলতে দেখেছি আমরা নাকি লোক দেখানো কাজ করছি।
ইসি রাশেদা বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে, জাল ভোটার থাকবে না, অবাধ ও উৎসবমুখর ভোট করা। জনগণ যাকে ভোট দেবে সে নির্বাচিত হবে। সবাইকে নিয়ে কাজ করছি। তার পরও আমাদের ওপর অনেকে আস্থা রাখতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, দেশে নির্বাচন হতে হবে। এটা সংবিধানের মূল কাজ। সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। আমরা নাকি লোক দেখানো কাজ করছি, এরও ভিত্তি নেই।
কর্মশালায় সাবেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, আমরা দেখছি বিরোধী দলও ইসিকে সহায়তা করছে না। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে মূল ভূমিকা রাখতে হবে। নির্বাচনে শুধু কমিশন নয়, অনেকে রয়েছে। অথচ কোনো সমস্যা হলে নির্বাচন কমিশন আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ায়।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, দেশে প্রধান দুটি দল দুই মেরুতে। এদের এক হতে হবে, ভোট সুষ্ঠু হবে। নির্বাচন সুন্দর করার মূল লক্ষ্য নিবন্ধিত দলকে এক করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে শক্তভাবে কাজ করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি বলেন, ভোট অবাধ করতে সবাইকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ভালো ভূমিকা নিতে হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় বাধা দেওয়া হয়, যাতে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ভালো ভূমিকা পালন করতে হবে। পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সবকিছু নির্ভর করবে নির্বাচনী পরিবেশের ওপর।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে কর্মশালায় সাবেক নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ বিশিষ্টজনরা উপস্থিত রয়েছেন। ৬৪ জেলার নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের মাধ্যমের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা ভার্চুয়ালি এই কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন।
ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট নিশ্চিত করা ও তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে জোর দিয়েছেন বক্তারা। একই সঙ্গে নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনেরও তাগিদ দেন সংশ্লিষ্টরা।