স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোরঃ
একাত্তরে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি শাসকদের অত্যাচার,অনাচার ও নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে এক কোটির অধিক লোক ভারতের পশ্চিম বঙ্গে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন। যশোর রোড হয়ে ভারতে যাওয়া শরণার্থীদের দুঃখ-দুদর্শা, অবর্ণনীয় কষ্টের বর্ণনা মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ, রচিত বিখ্যাত কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’-এ পাওয়া যায়। মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ স্বাধীনে বাংলার কৃষক মজুরসহ সাধারণ জনগণের অবর্ণনীয় ত্যাগ ও বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার রূপ নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে যশোর জেলা প্রশাসন সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড”-শীষক দুইদিন ব্যাপী (২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর) আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
গতকাল শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকালে কৃষ্ণবাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, সদর, যশোর-এর মাঠ থেকে বিখ্যাত কবি অ্যালেন গিন্সবার্গের কবিতার দৃশ্যায়নে প্রতীকী শরনার্থীদের ঢল নেমেছিলাম যশোর-বেনাপোল রোডে। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ শরণার্থীর বেশ ধারণ করে অংশ নিয়েছিলেন জেলা প্রশাসন আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাসান মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য।
আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক রফিকুল হাসান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সাইফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট রবিউল আলম, এইচ এম মাজহারুল ইসলাম মন্টু, মন্টু চাকলাদার, একরাম উদ-দৌলা, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোবাশ্বের বাবুসহ আরও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেন , ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা যেভাবে অত্যাচার নির্যাতন করেছিল তাতে অনেকে বাধ্য হয়ে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। সে সময় মার্কিন সরকার বাংলাদেশের বিপক্ষে থাকলেও একজন মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ, যিনি সে সময় রচনা করেছিলেন ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ কবিতা। এ কবিতা অবলম্বনে বাংলাদেশ ও ভারতে অনেক গান, নাটক, সিনেমা হয়েছে। আজকে সেই দিনটিকে স্মরণ করার জন্য এ আয়োজন করা হয়েছে। যাতে বাঙালি জাতি যতদিন থাকবে ততদিন তাদের হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ধারণ করে।
জেলা প্রশাসক আবরাউল হাসান মজুমদার বলেন, আমরা নিজেরা হেঁটে এসে শরণার্থীদের সেই কষ্ট, আত্মত্যাগটা আজ স্মরণ করছি। সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড যশোরের একটি গৌরব, একটি ইতিহাস। এই ইতিহাস যশোরের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে থাকতে সহায়তা করবে।
উল্লেখ্য ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ঐতিহাসিক যশোর রোডে শরণার্থীদের যুদ্ধবিভীষিকা, অবর্ণনীয় দুর্দশা ও যুদ্ধচিত্র নিয়ে মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ রচনা করেছিলেন বিখ্যাত কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’। এটি একটি কবিতা নয়, এটি বাঙালির আত্মত্যাগের একটি মূল্যবান উপাখ্যানও। আর সেই কালজয়ী কবিতা অবলম্বনে ঐতিহাসিক যশোর রোডেই একাত্তরের যশোর রোডকে মূর্ত করে তোলা হয়। একাত্তরে যেভাবে যশোর রোড ধরে শরণার্থীদের ঢল নেমেছিল, শিল্পী, সাংস্কৃতিককর্মী ও শিক্ষার্থীরা মিলে সেই শরণার্থীদের আদলে প্রতীকী পদযাত্রা করে ফুটিয়ে তোলেন একাত্তরের অবর্ণনীয় দুর্দশাকে। দুই দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে যশোরের সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চার শতাধিক শিক্ষার্থী ও কলাকুশলী অংশ গ্রহন করছে।আজ(২৩ সেপ্টেম্বর) শনিবারও একইভাবে যশোরে নামবে শরণার্থী বেশে হাজারো মানুষের ঢল।