তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে জনবল সংকটে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে পাঠদান। জোড়াতালি আর লেংরা পায়ের মত খুড়িয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে ক্লাস চালানো হচ্ছে। একাডেমিক ও প্রশাসনিক সকল পর্যায়ে জনবল সংকট রয়েছে।
এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, চিফ ইনস্ট্রাক্টর, ইনস্ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক পদ আছে ১২৬টি। এর মধ্যে পদায়ন আছেন ১৬ জন। অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন পর্যায়ের ১১০টি পদই শূন্য হয়ে আছে। শিক্ষকশূন্যতায় প্রতিষ্ঠানটিতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
ওই পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে সদর উপজেলার মাতারকাপনে মৌলভীবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটিতে দু’টি শিফট চালু আছে। আগে কর্মরত শিক্ষকেরা দু’টি শিফটেই ক্লাস নিয়েছেন। তখন শিক্ষকের পদ ছিল ৩৭টি। ২০২১ সাল থেকে নতুন করে দুই শিফটের জন্য আলাদা শিক্ষক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। নতুন সৃষ্টি হওয়া পদেও শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অধ্যক্ষের পদটিও শূন্য। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্ব পালন করছেন। উপাধ্যক্ষের দু’টি পদের মধ্যে কর্মরত একজন। কম্পিউটার বিভাগে তিনজন চিফ ইনস্ট্রাক্টরের মধ্যে তিনটি পদই শূন্য। ১০ জন ইনস্ট্রাক্টরের মধ্যে দু’জন কর্মরত। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টরের ১০টি পদের মধ্যে ১০টিই শূন্য। ইলেকট্রনিকস বিভাগে চিফ ইনস্ট্রাক্টরের পদ তিনটি, একজন কর্মরত। ইনস্ট্রাক্টরের ১০টি পদের মধ্যে একজন কর্মরত। ওয়ার্কশপ সুপারের একটি পদ, সেটিও শূন্য। ১০ জন জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টরের মধ্যে ১০টিই শূন্য। এসি বিভাগে চিফ ইনস্ট্রাক্টরের পদ চারটি, কর্মরত একজন। ইনস্ট্রাক্টর পদ ১০টি, কর্মরত একজন। ওয়ার্কশপ সুপারের পদ একটি, পদটিতে কর্মরত আছেন। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টরের ১০টি পদের মধ্যে ১০টিই শূন্য। ফুড বিভাগে চিফ ইনস্ট্রাক্টরের পদ তিনটি, একজন কর্মরত আছেন। ইনস্ট্রাক্টর পদ ১০টি, একজন কর্মরত। ওয়ার্কশপ সুপারের পদ একটি, এটি শূন্য। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টরের পদ ১০টি, একজন কর্মরত। নন-টেক বিভাগে চিফ ইনস্ট্রাক্টরের পদ দুটি, একজন কর্মরত আছেন। ইনস্ট্রাক্টরের পদ ১২টি, দুজন কর্মরত আছেন। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টরের পদ ১২টি, দুজন কর্মরত আছেন। ফিজিক্যাল এডুকেশন ইনস্ট্রাক্টরের পদ একটি, একটিই শূন্য। এই শূন্যতা পূরণ করতে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ আয় থেকে অল্প বেতনে অত্যাবশ্যকীয় শিক্ষক নিয়োগ এবং স্কিল অ্যান্ড ট্রেনিং এনহেন্সমেন্ট প্রজেক্টের (স্টেপ) শিক্ষক দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে ক্লাস চালু রাখা হয়েছে।
২০১৪ সাল থেকে বিশ্বব্যাংক, কানাডা ও সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত স্টেপ প্রকল্পের ১৮ জন ইনস্ট্রাক্টর ও জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর আছেন। তাঁরা ক্লাস নিচ্ছেন। কিন্তু ৩৮ মাস ধরে স্টেপের এই শিক্ষকেরাও বেতন পাচ্ছেন না। আর্থিক কষ্টের মধ্যে তাঁদের দিন চলছে। পদশূন্যতার জন্য কর্মরত শিক্ষকদের ওপরও চাপ পড়ছে। তাঁদের প্রায় নিয়মিতই একাধিক ক্লাস নিতে হচ্ছে। এতে ক্লাস হলেও সামগ্রিকভাবে মানসম্মত শিক্ষাদান ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে শিক্ষকের সহযোগী হিসেবে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে দেখানোর জন্য ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরের পদ আছে ৭৬টি। এর মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৩০ জন।
একই রকম শূন্যতা বিরাজ করছে একাডেমিক ও প্রশাসনিক স্টাফের ক্ষেত্রেও। ১৪ জন স্টাফের মধ্যে তিনজন কর্মরত। রেজিস্ট্রার, প্রধান সহকারী, হিসাবরক্ষক, ইউডিএ কাম ডাটা প্রসেসর (২), স্টোর কিপার, লাইব্রেরিয়ান, এলডিএ কাম ডাটা প্রসেসর (৩) এবং ইলেকট্রিশিয়ান কাম পাম্প অপারেটরের পদ শূন্য। ড্রাইভার (১), ল্যাব বেয়ারার (৮), অফিস সহায়ক/নিরাপত্তা প্রহরী (৬), পরিচ্ছন্নতাকর্মী (৩), মালী (১) এবং নিরাপত্তা প্রহরী (৬) আউটসোর্সিংয়ের এই ২৫টি পদে কোনো জনবল নেই। অত্যাবশ্যকীয় পদ্ধতিতে ৯ জনকে নিয়োগ দিয়ে এই বিভাগের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
মৌলভীবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৪৯১ জন। এর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ১৮০। একটি ছাত্রাবাস আছে। এর আসনসংখ্যা ৯৬। আসন পূর্ণই থাকে। দু’টি একাডেমিক ভবন ও একটি প্রশাসনিক ভবন রয়েছে।
মৌলভীবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ঘাটতি অনেক। কর্মরত শিক্ষক, অত্যাবশ্যকীয় নিয়োগ ও প্রকল্পের শিক্ষক দিয়ে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। শূন্য পদ পূরণের জন্য ওপরে বার্তা দেয়া হয়েছে।’