তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার খেজুরীছড়া চা বাগানে অবস্থিত র্যানার স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে যৌনহয়রানির অভিযোগ ওঠেছে। এ অভিযোগে র্যানার স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুলের শিক্ষক শয়ন তাঁতীকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ।
সোমবার (৪ঠা সেপ্টেম্বর) বিকালে তাকে আটক করা হয়। এর আগে সকালে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীর মা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্ত শিক্ষক রাজঘাট চা বাগানের গোপাল তাঁতির ছেলে জানা যায় থানা সূত্রে।
যৌনহয়রানির ঘটনাটি গত ২৭ শে আগস্ট সকাল ৯টার দিকে স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর শ্রেনী কক্ষে ঘটে বলে জানা গেছে। এতোদিন পর ঘটনার খবর জানতে পেয়ে গতকাল সোমবার সকালে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচারের দাবিতে স্কুল প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
ভুক্তভোগী ছাত্রী মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জানায়, শিক্ষক (‘স্যার) গত ৩ মাস যাবত আমাকে নানান উপায়ে বিরক্ত করে চলেছেন। বিভিন্ন ইঙ্গিতে কু প্র স্তা ব দিয়েছেন। আমি রাজি হইনি। গত ২৭ শে আগস্ট সকালে স্কুলে ক্লাস শুরুর আগে শিক্ষক শয়ন তাঁতি তাকে সপ্তম শ্রেণীর সি- সেকশন শ্রেনীকক্ষের ভিতর ডেকে নিয়ে যায়। তখন তার সাথে বান্ধবী ছিল, ওই শিক্ষক বান্ধবীকে খাওয়ার জন্য পানি আনতে পাঠিয়ে দেয়। সে সুযোগে ছাত্রীকে বলতে থাকে তোমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তুমি তো কিছু জানালে না আমাকে। এখন বলো তুমি আমার সাথে প্রেম করবা কিনা, ভালোবাসবে কিনা! তখন ছাত্রী বলে স্যার আমি বাসায় মা-বাবার সাথে আলাপ করে আপনাকে জানাবো। এখন কিছু বলতে পারবো না। ঠিক সে মুহুর্তে শিক্ষক শয়ন তাঁতি রুমের ভিতর একা পেয়ে ছাত্রীর হাতে ধরে টানা হেঁচড়া শুরু করে। এক পর্যায়ে বান্ধবী পানি নিয়ে চলে আসলে শিক্ষক ছাত্রীর হাত ছেড়ে দেয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খেজুরীছড়া চা বাগানের এক নারী মুঠোফোনে জানান, ‘অভিযুক্ত ওই শিক্ষক শয়ন তাঁতি পূর্বে তার কোচিং সেন্টারে আরো কয়েকজন মেয়ের সাথে এমন যৌনহয়রানির মতো ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। ৩ থেকে ৪ জন স্কুল পড়ুয়া মেয়েদেরকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন। যাকে কোচিং করাতো তার সাথেই প্রেম করতো। কিন্তু ভয়ে তারা কাউকে কিছু বলেনি। শিক্ষকের ব্যবহার ভালো না। ছোট-বড় সবার সাথে উনি এরকম আচরণ করতেন। এই ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। আমি এর সঠিক বিচার দাবি করছি।’
র্যানার স্কুল উচ্চ অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল হক বলেন, ‘যৌনহয়রানির ঘটনায় আমার বিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক শয়ন তাঁতির উপর একটা অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ের সভাপতি বরাবর ছাত্রীর পরিবার অভিযোগ দিয়েছে। যেহেতু অস্থায়ীভাবে সে চাকুরীরত ছিল, তাই আমরা তাকে বহিষ্কার করেছি। শিক্ষক প্যানেল থেকে বাদ দিয়ে দিছি। কিন্তু পুরাতন ছাত্ররা এই বিচারে সন্তুষ্ট নয়, তাই তারা সবাই মিলে স্কুলে আন্দোলন করেছে। আমি একজন নিয়োগকারী কর্মকর্তা হিসেবে তাকে চাকুরী থেকে বাদ দিতে পারি। কিন্তু তাকে শাস্তি দেওয়াটা তো আমাদের নিয়মের মধ্যে পড়ে না।’
ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই দূর্জয় সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘সোমবার সকালে ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা থানায় যৌনহয়রানির বিষয়ে অভিযোগ দায়ের কারেন। অভিযোগ দায়েরের পর পর অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে।’
শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম সোহেল বলেন, ‘অভিযোগ দেওয়ার পর শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আসামীকে আজ মঙ্গলবার কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে।’