আল নোমান শান্ত, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি: স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও কোমলমতি শিশুসহ প্রায় সব বয়সী মানুষের প্রিয় খাবারের তালিকায় থাকে বেকারির পণ্য। তবে বেকারিতে তৈরি ভেজাল পণ্য নিরাপদ মনে করে বিষ কিনে খাচ্ছেন মানুষ।
নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠছে নামে-বেনামে বেকারি। সেসবে তৈরি হচ্ছে মানহীন অস্বাস্থ্যকর পণ্য। বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বাজারগুলোর বেকারি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্নমানের ভেজাল পণ্য তৈরি করে দেদারে বাজারজাত করছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। দীর্ঘদিন ধরে এসব বেকারি’র তৈরি ভেজাল পণ্য বাজারজাত করা হলেও নজরদারিতে নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
সচেতনমহলের অভিযোগ, এসব খাদ্য পণ্যের মাননিয়ন্ত্রণ ও যাচাই করার দায়িত্বে যারা আছেন তারা সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন না বলেই এসব ভেজাল খাদ্য মানুষের পেটে যাচ্ছে।
খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্গাপুর পৌরসভার পৃথক-পৃথক স্থানে চম্পা বেকারি,ভৈরব বেকারি,মা বেকারি,ভাই-ভাই বেকারি। কাকৈরগড়া ইউনিয়নের ভাউরতলা বাজার এলাকায় তামান্না বেকারি ও বাকলজোড়া ইউনিয়নের কুমদগন্জ বাজার এলাকায় সাওদা বেকারি নিয়ে মোট ৬টি বেকারি রয়েছে। এছাড়াও বেকারি তৈরি পন্য মুজদ রেখে বিক্রির কনফেকশনারী দোকান রয়েছে অর্ধশতাধিক। এ-সব বেকারি’র কোনোটিতেই বিএসটিআই এর অনুমোদন নেই। এমনকি বেকারি পরিচালনায় কোনো নিয়মনীতিরই তোয়াক্কা করছে না। বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা এসব বেকারি অস্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করে বাজার জাত করে থাকলেও কোনো প্রকার ভেজালবিরোধী অভিযান না থাকায় মালিকরা তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে কোনো প্রকার অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে না।
অন্যদিকে নিজেদের বেকারির নামে ভ্যান গাড়ি ও অটোরিকশা দিয়ে গ্রাম পর্যায়ের চা স্টলসহ ছোট-বড় সব ধরনের দোকানগুলোতে পৌছে দিচ্ছেন তাদের তৈরি করা নিজস্ব বেকারির এসব পণ্য।
শাহীন মিয়া নামের এক ভোক্তা জানান, চম্পা বেকারি থেকে এক প্যাকেট পাউরুটি কিনেন। কিনার সময় দোকানীকে জিজ্ঞাসা করেন যে প্যাকেটে লাগানো মেয়াদ ঠিক থাকবে নাকি? বিক্রেতার ভাষ্যমতে,মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ থেকে আরো ২/৩ দিন পরেও খেতে পারবেন। এ কথায় বিশ্বাস করে তিনি বাড়ি নিয়ে গেলেন এরপর প্যাকেট খুলতেই দুর্গন্ধ এবং পাউরুটিতে সাদা সাদা চাতাল পড়ে গেছে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
একাধিক ভোক্তা জানান,বেকারি তৈরি রুটি,কেকসহ বিভিন্ন খাবার বাসায় নেওয়ার পর প্রায়ই প্যাকেট খুললেই দুর্গন্ধ বের হয়। যা খাওয়ার অনুপযোগী। তারা আরও জানায়,কোমলমতি শিশুরাও এ-সব ভেজাল খাদ্য খেয়ে পেট খারাপ জনিত নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল যেতে হয়েছে অসংখ্য বার।
পৌর শহরের পুলিশ মোড়ের ভৈরব বেকারি। মালিক স্বপন মিয়া জানান,বেকারি কারখানাটির স্থান পরিবর্তন করা হবে তাই খারাপ পরিবেশ। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি ভালো পরিবেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
উপজেলা স্যানেটারি ইন্সপেষ্টর মো. আলী আকবর জানান,বেকারি মালিকদের একাধিকবার বলা হয়েছে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে ও ভেজাল মুক্ত খাদ্য দ্রব্য প্রস্তত করতে। কিন্তু তারা কিছুই মানছে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার ডাঃ মো. তানজিরুল ইসলাম রায়হান জানান, ভেজাল কেমিক্যাল ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা খাদ্য সামগ্রী খেলে যেকেউ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। শিশুদের জন্য এসব খাবার বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এইসব ভেজাল খাবার খেয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার মো. হাবিবুর রহমানের ভাষ্যমতে, দূর্গম এলাকা হওয়ায় যাওয়া কম হয়। কিছুদিন আগে মনিটরিং করতে গিয়ে দেখেছি খুবই বাজে অবস্থা। ভেজাল পন্য তৈরি না করা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়ে এসেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান জানান, নজরদারি বাড়ানোর হবে এবং ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
টিএমবি/এইচএসএস