স্ত্রী সোফি গ্রেগরির সঙ্গে বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রুডো। এর মধ্য দিয়ে তাদের ১৮ বছরের বৈবাহিক সম্পর্কের ইতি ঘটল।
২০০৫ সালে মন্ট্রিলে বিয়ে করেছিলেন জাস্টিন ট্রুডো ও সোফি। বিচ্ছেদের ঘোষণার মধ্য দিয়ে এই দম্পতির দেড় যুগের বিবাহিত জীবনের অবসান ঘটল।
এর মাধ্যমে বাবার মতোই রেকর্ড গড়লেন জাস্টিন ট্রুডো। কারণ ট্রুডো হচ্ছেন কানাডার দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি ক্ষমতায় থাকাবস্থায় বিবাহ বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন।
আর এর আগে ক্ষমতায় থাকাকালীন বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা দেওয়া প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জাস্টিন ট্রুডোর বাবা পিয়েরে এলিয়ট ট্রুডো।
বিবিসির খবরে বলা হয়, এই দম্পতি ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে বিবাহবিচ্ছেদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পোস্টে তারা জানিয়েছেন, নিজেদের মধ্যে ‘অর্থপূর্ণ ও কঠিন আলোচনার’ পর তারা বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন।
পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিবাহবিচ্ছেদ হলেও তারা গভীর ভালোবাসা ও সম্মান নিয়ে একে অপরের পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে থাকবেন।
হঠাৎই তাদের বিচ্ছেদের ঘোষণা অনেককে বিস্মিত করেছে। অনেকের মনেই একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, কেন বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও সোফি গ্রেগরি দম্পতি।
ট্রুডোর সঙ্গে সোফির কেন বিচ্ছেদ হলো, তার কারণ স্পষ্টভাবে এখনো কিছু জানা যায়নি। তাদের নিজেদের পক্ষ থেকে স্পষ্ট না করলে হয়তো কখনোই জানা যাবে না।
ট্রুডোর কার্যালয়ের মুখপাত্রের বরাতে ডেইলি মেইল জানিয়েছে, বিচ্ছেদের খবর প্রকাশের আগেই সোফি পারিবারিক বাড়ি ছেড়ে অটোয়াতে আরেকটি বাড়িতে উঠেছেন।
ট্রুডোর কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য তারা সব ধরনের আইনি ও নৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং সামনেও সে অনুযায়ী কাজ করবেন। তারা ঘনিষ্ঠ পরিবারের মতোই থাকবেন। সোফি ও প্রধানমন্ত্রী তাদের সন্তানদের নিরাপদ, প্রেমময় এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বড় করার ওপর বেশি জোর দিচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে শুরু হতে যাওয়া ছুটিও তারা একসঙ্গে কাটাবেন।
ট্রুডো প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় সোফিকে এক সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তার প্রস্তুতি কেমন।
জবাবে সোফি বলেন, জীবনসঙ্গী হিসেবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সব সময়ই ট্রুডোর পাশে আছেন। তাকে সমর্থন দিচ্ছেন। এটিকে পারিবারিক বিষয় হিসেবেই দেখেন তিনি।
২০০৩ সালে দুজন প্রথম দেখা করা শুরু করেন। সোফি তখন ছিলেন একজন টিভি প্রেজেন্টার। তিনি তখন মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চ্যারিটিও করতেন।
২০১৪ সালে ‘কমন গ্রাউন্ড’ বইয়ে জাস্টিন ট্রুডো লিখেছিলেন, তার মা–বাবার বিচ্ছেদ হওয়ার কারণে তিনি কতটা যন্ত্রণা পেয়েছেন।
বলেছিলেন, মা-বাবার বিচ্ছেদ হওয়ার কারণে তিনি হীনম্মন্যতায় ভুগতেন। বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর এক সাংবাদিক ট্রুডোকে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন।
কানাডার গ্লোবাল নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই প্রসঙ্গ টেনে সোফি বলেছিলেন, আমাদের জীবনে যা ঘটছে, তা নিয়ে জিজ্ঞেস করুন। আমি বলছি না, যা–ই কিছু ঘটুক বা না ঘটুক—সবকিছু নিয়ে আমরা জবাব দেব।
কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে সাক্ষাৎকারে সোফি বলেন, আমি এ মুহূর্তে আপনাদের বলতে পারি, কোনো বৈবাহিক সম্পর্কই মসৃণ নয়। আমি একরকম গর্ববোধই করি যে আমাদের মধ্যেও কষ্ট আছে। হ্যাঁ, এই কষ্ট আছে, কারণ আমরা পরষ্পরের প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা চাই। সত্য জানতে চাই। আজীবন একে অপরের পাশে থাকতে চাই। আমরা দুজনই স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। যত দিন সম্ভব আমরা একসঙ্গে কাটাতে চাই।
২০২২ সালে তাদের বিয়েবার্ষিকীতে ট্রুডো ইন্সটাগ্রামে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ নিয়ে লিখেছিলেন।
‘আমরা রৌদ্রজ্জ্বল দিনের ভেতর দিয়ে যেমন গিয়েছি, ঝড়ের ভেতর দিয়ে গিয়েছি এবং দুটোর মাঝখান দিয়েও গিয়েছি।’ ইন্সটাগ্রামের সেই পোস্টে লিখেছিলেন ট্রুডো।
ট্রুডো ২০১৪ সালে প্রকাশিত তার আত্মজীবনীতে বৈবাহিক জীবনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে লিখেছেন।
আত্মজীবনীতে ট্রুডো লিখেছেন, আমাদের বিয়ে পুরোপুরি ঠিক ছিল না। আমরা নানা রকম উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে গেছি। তারপরেও সোফি আমরা সবচেয়ে ভালো বন্ধু হিসেবে আছে, আমরা পার্টনার এবং আমার ভালোবাসা। আঘাত আসলেও আমরা একজন আরেকজনের প্রতি সৎ থেকেছি।