তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের জুড়ীতে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে। রেকর্ড সংখ্যক ৬১৪ জন এসএসসি’তে ও দাখিলে ২৫৮ এবং ভোকেশনালে ৯ জন সহ মোট ৮৮১ জন শিক্ষার্থী অনুত্তীর্ণ করায় ফলাফল বিপর্যয়ে অভিভাবক ও সচেতন মহলের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও হতাশা বিরাজ করছে। ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধান করে আগামীতে ভালো ফলাফলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, জুড়ীতে চলতি বছরে ১৬ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় ১৯১১ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ১২৯৭ জন পাশ করেছে। পাশের হার ৬৭.৮৭%। ৩৬ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ফাইভ পেলেও এ বছর রেকর্ড সংখ্যক ৬১৪ জন শিক্ষার্থী অনুত্তীর্ণ করেছে। এদিকে দাখিল পরীক্ষার ফলাফলে আরো চরম বিপর্যয় ঘটেছে। এবছর উপজেলার আটটি মাদ্রাসা থেকে ৪১৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাশ করেছে মাত্র ১৬০ জন। পাশের হার ৩৮.২৭%। কোন শিক্ষার্থী মাদ্রাসা থেকে জিপিএ-৫ না পাওয়া ও ২৫৮ জন শিক্ষার্থী অনুত্তীর্ণ করায় মাদ্রাসার অভিভাবকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। তবে এসএসসি ও দাখিলের ফলাফলে বিপর্যয় ঘটলেও ভোকেশনালে ভালো ফলাফল অর্জন করে। ভোকেশনালে জায়ফরনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৫১ জন। পাশের হার ৮৫% এবং জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ১১ জন শিক্ষার্থী।
শতকরা ফলাফলে উপজেলায় সেরা হয়েছে হাজী সোনা মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয় থেকে ৪৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৪৪ জন পাশ করেছে। পাশের হার ৯৫.৬৫ এবং সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে কচুরগুল উচ্চ বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয় থেকে ৬৮ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে ২৫ জন পাশ করেছে। তাদের পাশের হার ৩৬.৭৬। এছাড়া জুড়ী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২১০ জন অংশ নিয়ে ১৭৯ জন পাশ করেছে। পাশের হার ৮৫.২৪%, জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ১৮ জন। মক্তদীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ১৬৭ জন অংশ নিয়ে ১০৯ জন পাশ করেছে, পাশের হার ৬৫.২৭%, জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ৮ জন। জায়ফরনগর উচ্চ বিদ্যালয় ১৮৩ জন অংশ নিয়ে ১৩৮ জন পাশ করেছে। পাশের হার ৭৫.৪১, জিপিএ ফাইভ ১ জন। ফুলতলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২১৮ জন অংশ নিয়ে ১৮৭ জন পাশ করেছে, পাশের হার ৮৫.৭৮, জিপিএ ফাইভ ২ জন। পাতিলাসাঙ্গন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৩০ জন অংশ নিয়ে ৬১ জন পাশ করেছে। পাশের হার ৪৬.৯২%। হাজী ইনজাদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৬৩ জন অংশ নিয়ে ৯৫ জন পাশ করেছে। পাশের হার ৫৮.২৮%, জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ৩ জন। নিরোদ বিহারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৩০ জন অংশ নিয়ে ৬৯ জন পাশ করেছে। পাশের হার ৫৩.০৮%, জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ২ জন। শিলুয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৯৮ জন অংশ নিয়ে ৪২ জন পাশ করেছে। পাশের হার ৪২.৮৬%। ছোটধামাই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৯৪ জন অংশ নিয়ে ৪৭ জন পাশ করেছে। পাশের হার ৫০%। এম সাইফুর রহমান হাজী মনোহর আলী উচ্চ বিদ্যালয় ৮০ জন অংশ নিয়ে ৪১ জন পাশ করেছে। পাশের হার ৫১.২৫%। সাগরনাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১১৭ জন অংশ নিয়ে ১১১ জন পাশ করেছে। পাশের হার ৯৪.৮৭%, জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ১ জন। রাঘনা বটলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১০৭ জন অংশ নিয়ে ৭৯ জন পাশ করেছে। পাশের হার ৭৩.৮৩। হোছন আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৫৪ জন অংশ নিয়ে ৩৬ জন পাশ করেছে। পাশের হার ৬৬.৬৭%, জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ১ জন। জীবনজ্যোতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৩৯ জন অংশ নিয়ে ৩৪ জন পাশ করেছে পাশের হার ৮৭.১৮।
উপজেলার আটটি মাদ্রাসা থেকে কোন শিক্ষার্থী জিপিএ ফাইভ পায়নি। নয়াবাজার আহমদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ৬৫ জন অংশ নিয়ে ৩৯ জন পাশ করেছে,পাশের হার ৬০%। হযরত শাহখাকী দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৪১ অংশ নিয়ে ১৬ জন পাশ করেছে পাশের হার ৩৯.০২, সাগরনাল মাদ্রাসা থেকে ১৩১ জন অংশ নিয়ে ৪১ জন পাশ করেছে,পাশের হার ৩১.৩০। জাঙ্গিরাই দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৬৫ জন অংশ নিয়ে ২৫ জন পাস করেছে, পাশের হার ৩৮.৪৬। নয়াগ্রাম শিমুলতলা দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৩৩ জন অংশ নিয়ে ১২ জন পাশ করেছে, পাশের হার ৩৬.৩৬। জায়ফরনগর মহিলা দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২০ জন অংশ নিয়ে ৯ জন পাল করেছে, পাশের হার ৪৫.০০%। শাহপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২৭ জন অংশ নিয়ে ১৫ জন পাশ করেছে, পাশের হার ৫৫.৫৬। এমএ মুছাওয়ী দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১৬ জন অংশ নিয়ে ৩ জন পাস করেছে, পাসের হার ১৮. ৭৫।
ফলাফল বিপর্যয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে একাডেমিক সুপারভাইজার মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, নিয়মিত বিদ্যালয় মনিটরিং করে শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।