লেখক: অপ্র সাহা
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
বর্তমান সময়ে বহুল আলোচিত ব্যাধি ডেঙ্গু জ্বর। ডেঙ্গু মূলত এডিস ইজিপ্টি নামক মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ, যা সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বিশেষ করে বর্ষার মৌসুমে শুরু হয়, যার ব্যাপ্তিকাল জুন-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে। বাংলাদেশে এডিস মশার প্রজনন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ অনুকূল জলবায়ু। যার ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এখন বর্তমানে দেশের সব জেলাতেই ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে ঢাকার সবগুলো সরকারি হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার বেশি ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও এখন প্রতিদিন যত রোগী ভর্তি হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই ডেঙ্গু আক্রান্ত। বিশেষ করে ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী ব্যক্তিরা ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্তদের বেশিরভাগই ঢাকা শহরের বাসিন্দা।
এবারের ঈদের ছুটিতে কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে এডিস মশার বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এছড়াও এসময়ে বিভিন্ন অফিস, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। ধারণা করা যাচ্ছে, বৃষ্টিপাতের কারণে এসব স্থানে পানি জমা থাকতে পারে। ফলে প্রাণঘাতী এডিস মশার নিরবচ্ছিন্ন বংশবিস্তারে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে বর্তমান সময়ে ডেঙ্গুর ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
ডেঙ্গুতে প্রায় প্রতিদিনই কয়েক শতাধিক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এবংগিড়ে ৫-৯ জন করে মৃত্যবরণ করছে। তাই এটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পারলে এক পর্যায় গিয়ে আরও ভয়াবহ রূপ ধারন করতে পারে।
বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ আর এই রোগের ভাইরাস আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠার পরেও সেদিকে নজর না দেয়ায় এই বছর ডেঙ্গু মারাত্মক হয়ে উঠেছে বলে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করছেন। তারা বলছেন,এক সময়ে বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগটি মৌসুমি রোগ বলে মনে করা হলেও, গত কয়েক বছর ধরে সারা বছর জুড়ে এর প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ১৯৬৫ সালে। তখন এই রোগটি ঢাকা ফিভার নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে রোগটির সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের প্রথমে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। জনগণ, সরকার, সিটি করপোরেশন, কমিউনিটি ভিত্তিক সংগঠন সবাইকে যার যার জায়গা দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমাদের চারপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, আমাদের শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।আমরা যদি ঢাকার শহরের দিকে লক্ষ্য করি বিশেষ করে পুরান ঢাকা তাহলে দেখতে পাবো আমাদের চারপাশে অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা যদি নিজ নিজ উদ্যোগে এলাকা বা শহর অপরিচ্ছন্ন রাখার বিরুদ্ধে সচেতন না হই তাহলে কোনোভাবেই এই শহর বা এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হবে না। এছাড়াও শহরের বাইরে বিভিন্ন এলাকায় ছোট মাঝারি গর্তের ভিতর অনেক দিন ধরে পানি জমে থাকলে মশার উৎপত্তি হয় তাই এগুলো থেকে পানি সরিয়ে ফেলতে হবে বা গর্ত ভরাট করে দিতে হবে। বাড়িঘরের আশেপাশে জঙ্গল থাকলে তা পরিষ্কার রাখতে হবে। বাড়ির আশেপাশে মাটির ভাঙ্গা পাত্রে পানি জমে থাকলে পরিষ্কার করতে হবে।
ডেঙ্গু সম্পর্কে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্রছাত্রীদের সর্তক করতে হবে।স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারী টাঙ্গিয়ে ঘুমাতে হবে। ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকাকালীন সময়ে দিনের বেলাও মশারী টাঙ্গিয়ে ঘুমানো উচিত কেননা ডেঙ্গু মশা সাধারণ বেশির ভাগ সময় দিনের বেলা ও সন্ধ্যায় কামড়ায় । এছাড়াও মশা নিধনের আরো অনের উপকরণ আছে সেগুলোও ব্যবহার করতে হবে। আজকাল ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় মশা নিধনের ওষুধ দেওয়া হয় যা ডেঙ্গু মশা নিধনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হয়। কোনো ব্যক্তি বা শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে এর কোনো বিকল্প নেই। শিশুদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া খুবই ঝুকিপূর্ণ।তাই ডেঙ্গু সম্পর্কে আমরা সচেতন থাকবো অন্যকে সচেতন করবো।