ভ্রমণে দেখবো, জানবো, শিখবো
বিভিন্ন উদ্দেশ্যে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গেলে সেটাকেই সাধারণত ভ্রমণ বলে থাকি আমরা। কিন্তু এই উদ্দেশ্য গুলো হয় ভিন্ন ভিন্ন। কেউ বাণিজ্যিক বা অন্যান্য প্রয়োজনে ভ্রমণ করে, কেউ জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ভ্রমণ করে, কেউ বা বিভিন্ন স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগের জন্য, আবার কেউ আনন্দের জন্য ভ্রমণ করে। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভ্রমণের বেশ ঝোঁক লক্ষ্য করা যায়। এটি দেশ ও জাতির জন্য একটি আলোকিত বার্তা যদি এই ভ্রমণের ঝোঁক তরুণরা শিক্ষার একটি অংশ হিসেবে বেছে নেয়। পূর্বে দেশ ও জাতি ভ্রমণ করাকে বিলাসিতা হিসেবেই ভাবতো। কিন্তু কালের পরিক্রমায় মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে। বর্তমানে ভ্রমণ নিয়ে সকলের মাঝেই এক ইতিবাচক চিন্তাধারা কাজ করে। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাওয়ার পেছনের বিভিন্ন কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ সম্ভবত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দর্শক ও পাঠকদের সামনে ভ্রমণের শিক্ষামূলক প্রতিবেদন কিংবা আগ্রহমূলক গল্প প্রকাশ করার নিরলস প্রচেষ্টা। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি নানা বয়সের মানুষের মধ্যে ভ্রমণ করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই ভ্রমণ পিপাসা লক্ষ্য করা যায়। প্রতিবছর নিদৃিষ্ট কিছু সময়ে দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে নানা বয়সের মানুষের ভিড় জমতে দেখা যায়। কিন্তু বেশিরভাগই দেখা যায় আনন্দ উপভোগের জন্য ভ্রমণ করছে। ভ্রমণে দেখার সাথে সাথে শেখার আগ্রহ টা খুব কম মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। আমরা প্রতিবার ভ্রমণে যাওয়ার সময় যেমন নতুন জায়গা খুঁজি ঠিক তেমনই নতুন জায়গায় গিয়ে সেই পরিবেশ থেকে, সেই স্থানের মানুষদের থেকে নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করা উচিত। বিশ্বের প্রতিটি দেশ, জেলা বা গ্রাম, যেখানেই যাই না কেন, দেখা যাবে প্রতিটি স্থানের মানুষের ই নিজস্ব সংস্কৃতি, রীতিনীতি বা জীবনযাপনের পদ্ধতি রয়েছে। ভ্রমণে গিয়ে সেই স্থানের মানুষ, প্রকৃতি ও পরিবেশ থেকে নতুন কিছু শিখতে পারলেই ভ্রমণ সার্থক হওয়া সম্ভব। যেমন: বাংলাদেশের পাহাড় অঞ্চল গুলো এদেশের মানুষের দর্শনীয় স্থানের তালিকার প্রথম সারিতে রয়েছে। এসব অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখার সাথে সাথে দর্শনীয় স্থানগুলো তৈরির পেছনের ইতিহাস, সেখানে বসবাসরত আদিবাসীদের সংস্কৃতি, তাদের কঠিন জীপনযাপন যেখানে দেশের অন্যান্য সাধারণ মানুষের মত পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই, সেই সম্পর্কে জানা ও শেখার মাধ্যমে ভ্রমণকে শিক্ষণীয় করে তোলা সম্ভব। আবার যদি সমুদ্র কিংবা হাওর এলাকায় ভ্রমণ করা যায়, দেখ যাবে সেখানকার মানুষের কনকনে শীতেও পানিতে নেমে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহের কঠিন চিত্র।
বর্তমান ভ্রমণপিপাসু তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিভিন্ন পাহাড়, সমুদ্র, হাওর বা বিল দেখার সাথে সাথে সেই স্থানের মানুষদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক রীতিনীতি, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভাস ও তাদের ধ্যানধারণা জানার ও শেখার চিন্তাধারা জাগ্রত হলে তা ভবিষ্যৎ জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাই ভ্রমণ শুধু হৈ-হুল্লোড় কিংবা দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে দেখার মাঝে শেখার মানসিকতা রাখতে হবে। কেননা জীবনে স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে হলে শেখার উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা বাঞ্চনীয়।
সিদরাতুল মুনতাহা
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা