শান্তি এবং স্বস্তি কে না চায়? যেহেতু সমগ্র জগতে অশান্তি এবং উত্তেজনায় ছেয়ে গেছে! শান্তিপূর্বক বাঁচা যদি আয়ত্ত হয়, তাহলে জীবন যাপনের উত্তম উপায়ও হাতের মুঠোর মধো এসে যাবে। প্রকৃত ধর্ম বাস্তবিকই সুস্থ জীবন যাপনের উপায় যার দ্বারা আমরা নিজেও শান্তিতে বাঁচাতে পারি না, অন্যদেরও সুখ শান্তিতে বাঁচাতে দিতে পারি। শুদ্ধ ধর্ম এটাই আমাদের শিক্ষা দেয় – এজন্য এই শুদ্ধ ধর্ম সার্বজনীন, সার্বকালিক এবং সার্বভৌমিক। সম্প্রদায় ধর্ম নয়। সম্প্রদায়কে ধর্ম বলে মানা প্রবঞ্চনা মাত্র। জানতে চেষ্টা করুন, ধর্ম কিভাবে শান্তি দেয়?

প্রথম জানা দরকার আমরা অশান্ত এবং চঞ্চল কেন হই? গভীরভাবে চিন্তা করলে অবশ্যই বোঝা যাবে যে যখন আমাদের মন বিচারসমূহের দ্বারা বিকৃত হয়ে ওঠে তখন তা অশান্ত হয়ে যায়। ত্রুোধ, লোভ, ভয়, বা এজাতীয় কোন কিছু দ্বারা মন অশান্ত হতে পারে। তখন বিক্ষুব্ধ হয়ে আমরা ভারসাম্য বা সমতাকে হারিয়ে বসি। অতএত এর ঔষধ কি যাতে ত্রুোধ, ভয় ইত্যাদি একেবারে না আসে, বা এলে তার দ্বারা আমরা অশান্ত হয়ে না উঠি?
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই বিকার কেন আসে? অধিকাংশক্ষেত্রে কোন অপ্রিয় ঘটনার প্রতিক্রিয়াস্বরুপ আসে। তাহলে এটা কি সম্ভব যে সংসারে থাকব অথচ কোন অপ্রিয় ঘটনা ঘটবে না? কোন প্রতিকূল পরিস্থিতি উৎপন্ন হবে না? না, এটা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। জীবনে প্রিয় অপ্রিয় উভয় প্রকার পরিস্থিতি আসবেই! তবে চেষ্টা করতে হবে যাতে বিষম পরিস্থিতি উৎপন্ন হলেও আমরা নিজের মনকে যেন শান্ত রাখতে পারি। চলার রাস্তায় কাঁটা তো থাকবেই। উপায় হতে পারে যে আমরা জুতা পরে চলবো। রোধ বৃষ্টি থাকবেই তবে ছাতা নিয়ে আমরা তা থেকে বাঁচতে পারি। তাহলে দেখা যাচ্ছে প্রতিকূল পরিস্থিতি থাকলেও আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারি।

তবে সুরক্ষা এতেই আছে যে, কেউ আমাকে গালি দিল, অপমান করলো তাহলেও ক্ষুব্ধ না হয়ে আমি নির্বিকার থাকবো। এখানে একটা কথা বিচার্য যে কোনো ব্যক্তি অযোগ্য ব্যাবহার করলে সেই কারণ হচ্ছে আমাতে অথাৎ আমার মধ্যে ক্ষোভ, বিকার কেন উৎপন্ন হয়, এর কারণ হচ্ছে আমার প্রতিকূল ঘটনার সংঘাত হলে মনে বিভিন্ন রকম প্রতিফলিত হয়। এই জন্য যে ব্যক্তি অন্তর্মন পরম শুদ্ধ কোন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কোন বিকার বা অশান্তি তাঁর মধ্যে উৎপন্ন হয়।

তবে প্রশ্ন হচ্ছে যতদিন অন্তর্মন পরম শুদ্ধ না হয় ততদিন কি করণীয়? এই সমস্যা সমাধান খুঁজতে আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে ভগবান বুদ্ধ নিজের অনুভূতি দ্বারা এটা জেনেছেন যে অপ্রিয় বিকার থেকে পালিয়ে না গিয়ে সেই বিকার একেবারে সামনে টেনে আনতে হবে। যে কারণে যে বিকার উৎপন্ন হচ্ছে কারণটাকে ভাল করে দেখতে হবে। হিংসা উৎপন্ন হলে হিংসা উৎপন্ন হচ্ছে ঠিক তেমন তেমন ভেবে দেখতে হবে। এইভাবে যে কোন বিকার উৎপন্ন হলে তাকে যথাযথভাবে দেখতে থাকলে সেই বিকার ক্ষীণ হতে ক্ষীণতর হতে থাকবে। বিকার থেকে মুক্তি কি ভাবে হবে! এই এক সমস্যা হচ্ছে এই যে, আলম্বন থেকে মুক্ত বিকারকে সাক্ষীভাবে দ্বারা কিভাবে দেখা যাবে? এখন আমাদের মাঝে সমস্যা দুটি এক বিকার উৎপন্ন হওয়ার সময় আমরা কিভাবে সচেতন হবো? দুই সচেতন হয়ে গেলে বিকারের নিরীক্ষণ সাক্ষীভাবে দ্বারা কিভাবে সম্ভব? ভগবান বুদ্ধ সন্ধান করে দেখেছেন যে, কোনও কারণে মনে বিকার উৎপন্ন হয়, তখন একে তো শ্বাসের গতির মধ্যে অস্বাভাবিকতা আসে এবং দ্বিতীয়ত শরীরে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উপর কোন না কোন প্রকার জীব রাসায়নিক ক্রিয়া হতে থাকে। যদি এই দুটোরই দেখার অভ্যাস করা হয়, তাহলে পরোক্ষভাবে নিজের বিকারকে দেখার কাজ শুরু হয়ে যায় এবং বিকার ক্ষীণ হয়ে নির্মূল হতে শুরু করে। আর এই শ্বাসকে দেখার অভ্যাসকেই ধ্যান বলে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version