মাহমুদুর রহমান রনি (বরগুনা) প্রতিনিধি:-
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা শিক্ষা অফিসার টি.এম. শাহ আলমের বিরুদ্ধে ব্যপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাথরঘাটার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনির্বাচিত সভাপিতি আ. রাজ্জাক আজ মঙ্গলবার (১৮ জুলাই ) সকাল ১০টার দিকে পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন। এর আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরও পৃথক লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়াও ওই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ আদায়, অনিয়ম-দুর্নীতি ও শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণসহ শিক্ষকদের আক্রশমূলক বদলির অভিযোগ রয়েছে।
আ. রাজ্জাক আজ মঙ্গলবার পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে লিখিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমি স্কুলে ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন করতে গেলে শিক্ষা অফিসার টিএম শাহ আলম আমি যাতে সভাপতি নির্বাচিত না হতে পারি সে ব্যাপারে ওই নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তা নিয়োগসহ নির্বাচনে তার (শিক্ষা অফিসার টি.এম. শাহ আলম) পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ই করতে ভোটারদের চাপ প্রয়োগ করে আমার বিরুদ্ধে নির্বাচন হস্তক্ষেপ করেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয় লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পাথরঘাটা উপজেলা শিক্ষা অফিসার টি.এম. শাহ আলম সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এইউইও) পদ থেকে পদন্নতি পেয়ে গত ২০২০ সালের ১৩ অক্টেবর পাথরঘাটা উপজেলায় যোগদান করেন।
তিনি যোগদানের পর থেকেই উপজেলার ছোনবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গায়েত্রী রানীকে অনৈতিকভাবে তার কার্যালয়ে বসান এবং ওই শিক্ষককে দিয়ে কৌশলে দীর্ঘদিন ধরে ঘুস বানিজ্য করে আসছেন। শিক্ষক গায়েত্রী রানী বিদালয় অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শিক্ষা অফিসারকে জানালে শিক্ষক গায়েত্রী রানীকে অনৈতিকভাবে উপজেলার লাকুরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাগজে কলমে বদলি করেন। ওই স্কুল থেকে শিক্ষক নিয়মিত বেতন-ভাতা নিলেও শিক্ষা অফিসারের ঘুস বানিজ্য ঠিক রাখতে স্কুলে না গিয়ে শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় নিয়মিত বসেন। বিভিন্ন জাতীয় প্রোগ্রামের নামে শিক্ষা অফিসার টিএম শাহ আলম প্রতিটি স্কুল থেকে চাঁদা আদায় করেন। ডেপুটেশন চালু না থাকলেও তার নিজস্ব গ্রুপ নিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে না জানিয়ে নিজের খেয়াল খুশি মতো শিক্ষক ডেপুটেশন প্রদান করেন। তার কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে, তিনি দাম্ভিকতার সঙ্গে বলেন যে, তিনি নাকি এর পূর্বের উপজেলা কর্ম থাকাকালীন সময়ে সেই জেলার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে উচিত শিক্ষা দিয়েছেন বলেও অভিযোগে বলা হয়।
অভিযোগে আরো বলা হয়, শিক্ষা অফিসার টিএম শাহ আলম অফিস চলাকালীন সময় তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ শিক্ষকদের নিয়ে গ্রুপিং আর নিজের গুণকীর্তণ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। অফিস শেষে রাত ১০টা পর্যন্ত নিয়মিত তার কার্যালয়ে আড্ডা বসান এবং তার পছন্দের খাবার পছন্দের শিক্ষকদের তার ফ্ল্যাটে নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দেন। এছারাও স্কুল পরিদর্শনে যাওয়ার আগের দিন স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জানিয়ে দুপুরে সেখানে খাবেন ও পছন্দের খাবার রাখার নির্দেশ দেন। কোন শিক্ষক তার এসব কর্মকান্ডের প্রতিবাদ বা তাঁর মতের বিরুদ্ধাচরণ করলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে শিক্ষকদের সাথে দুর্বব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক শিক্ষক বলেন, এই শিক্ষা অফিসারের জন্য পাথরঘাটার শিক্ষার মান পদে পদে ক্ষুন্ন হচ্ছে। তার নিজস্ব আইনে চলে শিক্ষা অফিস ও উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষা অফিসার টি.এম. শাহ আলম উপজেলার শিক্ষার মান উন্নয়নে কোন তদারকি না করে তার কার্যালয় বসে কোন শিক্ষককে হয়রানি করা যায় তার মহাপরিকল্পনা করেন। এ পর্যন্ত বহু শিক্ষককে অহেতুক হয়রানি করেছেন। শিক্ষকদের হয়রানী করাই তার নেশা।
এ বিষয় পাথরঘাটা উপজেলা শিক্ষা অফিসার টি.এম. শাহ আলম বলেন, আমার অফিসে কম্পিউটার অপারেটর না থাকায় শিক্ষক গায়েত্রী রানীকে দিয়ে কাজ করানো হয়। আমার অফিস সম্পুর্ন দুর্নীতিমুক্ত। এখানে কোন প্রকার টাকা পয়সা লেনদেন হয়না। তবে গায়েত্রী ম্যাডাম কাউকে কোন আবেদন লিখে দিয়ে হয়তো অল্প কিছু টাকা পয়সা নিয়ে থাকে।