তাসলিমুল হাসান সিয়াম,গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ
বাংলা ঋতু চক্রে সময়টা এখন বর্ষা । এই ঋতুর রঙের শেষ নেই। কখনো আকাশে ফুটে ওঠে ঝলমলে রোদ, খানিক পরেই রোদ ঢাকা পড়ে কালো মেঘের ভেলায়। আবার কখনো হয়ে যায় একপশলা বৃষ্টি। গ্রামের পথে হাঁটতে থাকলে যত দূর চোখ পড়ে, দেখা যায় নিবিড় সবুজ মাঠ। আকাশের দিকে তাকালে দেখা যায়, মুক্ত প্রকৃতিতে রঙিন ঘুড়িতে আকাশ ছেয়ে গেছে।
পড়ন্ত বিকেলে উত্তরের জেলা গাইবান্ধার গ্রামাঞ্চলের আকাশে উড়ছে বাহারি রঙের ঘুড়ি। লাল, নীল,কালো , হলুদ, বেগুনি নানা রঙের ঘুড়ি দেখে মনে হচ্ছে, রঙের মেলা বসেছে আকাশজুড়ে। এসব ঘুড়ি উড়ানোর জন্য কাঁচা রাস্তা ও ফসলের মাঠের আইলকে নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে শিশু কিশোররা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গাইবান্ধা সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিকেল থেকে রাতে ছোট-বড় নানা বয়সী ঘুড়িপ্রেমী মেতেছেন এই খেলায় । খালি মাঠে বসে এসব ঘুড়ি উড়াতে দেখা গেছে। বর্তমানে ঘুড়ির চাহিদা বাড়ায় ৫০ থেকে ২৫০ টাকায় প্রতিটি ঘুড়ি কিনছেন আগ্রহীরা।হালের ইন্টারনেট প্রেমী কিংবা স্মার্টফোনে বুঁদ হওয়া তরুণ প্রজন্মকে মাঠে ফেরাতে দারুণ কাজ করছে ঘুড়ি। আকাশে যেসব ঘুড়ি দেখা যায় তা হলো চারকোণা আকৃতির চং ঘুড়ি, সাপ ঘুড়ি,ড্রাগন, বক্স, ঈগল ঘুড়ি ।ঘুড়ি প্রেমী চতুর্থ শ্রেণীর সায়েম বলেন, বন্ধুরা মিলে বাড়ির পাশের মাঠে গিয়ে ঘুড়ি উড়িয়ে সময় কাটাচ্ছেন। এগুলো দেখে বিনোদন উপভোগ করে মুগ্ধ হচ্ছেন স্থানীয়রা।
৪৫ বছর বয়সী যুবক মমিন মন্ডল বলেন, তিনি যুবক বয়সে বাদামী রঙের মোটা কাগজে নানা ধরণের ঘুড়ি বানিয়ে উড়িয়েছেন। সে সময় গ্রামাঞ্চলে নিয়মিত ঘুড়ি বানানো ও উড়ানোর প্রতিযোগিতা হত। কিন্তু সময়ের আবর্তে এখন আর তা দেখা যায় না।
তিনি আরো বলেন, তার মনে হয় এক সময় আসবে যখন ঘুড়ি শব্দটি কি জিনিস তা শুধু শহরেই নয়, গ্রামাঞ্চলের শিশুরাও না দেখলে বলতে পারবেনা।
গাইবান্ধার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রমতোষ সাহা বলেন, এক সময় আবহমান গ্রাম বাংলার শিশুদের বিনোদনের একটি অংশ ছিল ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতা। পারিপার্শ্বিক কারণে এ ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতা আর চোখে পড়েনা। তবে বছরের যে কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে গ্রামাঞ্চলে অন্যান্য খেলাধুলার পাশাপাশি ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ঘুড়ি খেলা জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।