মিয়া মোহাম্মদ ছিদ্দিক,কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ
টিফিনের টাকা জমিয়ে জমিয়ে একের পর এক তৈরি করেছে দারুন সব জিনিস ৮ শ্রেণীর শিক্ষার্থী হিমেল (১৪)। তার মেধা ও মনের মধ্যে নতুন কিছু উদ্ভাবনের নেশা। আর এ নেশা থেকে তৈরি করেছে উড়োজাহাজ,লঞ্চ,বাস সহ দারুন সব যানবাহন। তার এসব তৈরি জিনিস দেখে মুগ্ধ এলাকাবাসী। এলাকায় পরিচিতি পেয়েছে ক্ষুদে বিজ্ঞানি হিসেবে। তবে অর্থ সংকটে থমকে আছে কাজ ও অনিশ্চিত ভবিষ্যত স্বপ্ন।
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউপির বিলপাড় গজারিয়া গ্রামের বোরহান মিয়ার ছেলে হিমেল। তার বাবা দীর্ঘ দিন ধরে প্রবাসে থাকলেও দেশে আসেনি। পরিবারের সাথে খুব একটা যোগাযোগ রাখেন না। ফলে পরিবারটি অভাব অনটনে চলতে হচ্ছে।
পরিবারসুত্রে জানা যায়,ছয় বছর থেকেই হিমেল নতুন কিছু তৈরি করতে শুরু করে। তখন থেকেই তার মাথায় আবিস্কারের নেশা। দু’বছর আগে একটি রোবট তৈরি করে। বাংলায় কথা বলতে পারতো এবং কিছুটা মানুষের মতো চলাফেরা করার মতো অবস্থায় ছিলো। কিন্তু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে খুব বেশি আগাতে পারেনি। তার বসতঘরের ভিতরে চারপাশে থরে থরে সাজানো তৈরি করা অনেক জিনিসপত্র। নতুন করে তৈরি করেছে উড়োজাহাজ। কিন্তু যন্ত্রপাতির অভাবে উড়ানো সম্ভব হচ্ছেনা। দুর্যোগ সহনশীল একটি লঞ্চ রিমোট কন্ট্রোলে পানিতে চালিয়ে দেখানো হয়। সরকারি ও বেসরকারি কোন সংস্থা প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সাপোর্ট করলে নতুন কিছু তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করছে হিমেল। তার কাছে রয়েছে একটি ব্যাটারি ও কন্টোলার। একটিই তার একমাত্র সম্বল। তা দিয়েই সবগুলো যানবাহন চালিয়ে দেখিয়েছে। বর্তমানে হিমেল স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। তার স্কুল থেকেও পায়নি কোন সাপোর্ট। উল্টো শিকার হয়েছে অবহেলার।
সার্বিক বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থী হিমেল বলে, তার ভবিষ্যতে স্বপ্ন বিজ্ঞানি হবার। অর্থের অভাবে থেমে আছে উদ্ভাবনের কাজ। চাহিদামতো যন্ত্রপাতি মিলছেনা। ফলে নতুন কিছু তৈরি করা যাচ্ছে না। সরকারের সহায়তা ও সাপোর্ট পেলে ভালো কিছু তৈরি করে দেশের জন্য অবদান রাখার স্বপ্ন তার মনে।
হিমেলের মা হোসন্নাহার জানান,আমার ছেলে যখন এসবগুলো ঘরে বসে বসে লেখাপড়ার ফাকে তৈরি করে তখন আমার খুব ভাল লাগে এবং নিজেকে গর্ববোধ করি।আর ভাবি ছেলেকে অর্থ খরচ করতাম তাহলে আরও কিছু হতে পারত। কিন্তু অর্থের অভাবে পারছিনা।তাই সরকারের কাছে আমার ছেলের স্বপ্নটা বাস্তবায়ন করতে সহযোগিতার জোরদাবি জানাচ্চি।
ষাটোর্ধ্ব আব্দুস ছালাম,হৃদয় মিয়া,মোঃ ফারুক মিয়া জানান,হিমেলের আবিস্কার দেখে আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেক কিছু শিখতে পারবে যা মাদক ও কিশোরগ্যাংসহ বিভিন্ন অপকর্ম থেকে দুরে রাখতে সহায়তা করবে।আমাদেরও দাবি হিমেলের পরিবারটি গরীব। সে সরকারিভাবে সহায়তা পেলে বড় কিছু করে দেখাতে পারবে।
বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মো. শামিম হোসাইন বলেন,বিষয়টি জানতাম না। সরকার প্রযুক্তিকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে উদ্ভাবনের কাজ এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে।