বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসম্যান, সিনেটর ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টের কতিপয় সদস্যের চিঠির বিষয়ে আলোচনা করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ সরকারের ভাবমূর্তি বিশ্ব অঙ্গনে অটুট রাখতে এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রতি সপ্তাহে দুই দিন প্রেস ব্রিফিং করতে পরামর্শ দেওয়া হয় কমিটির পক্ষ থেকে।
কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান এতে সভাপতিত্ব করেন। কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, মো. আব্দুল মজিদ খান, কাজী নাবিল আহমেদ এবং নিজাম উদ্দিন জলিল (জন) এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্প্রতি সুইজারল্যান্ড সফরের ওপর একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।এছাড়াও অস্ট্রিয়া ও ইথিওপিয়ায় বাংলাদেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতরা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সহযোগিতার ক্ষেত্র নিয়ে স্ব স্ব কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের সর্বশেষ অবস্থা অবহিত করা হয় বৈঠকে।
বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও নির্বাচন নিয়ে জো বাইডেন সরকারের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করা ১২ কংগ্রেসম্যানকে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠি দেওয়া ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ছয় কংগ্রেসম্যান ও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে চিঠি দেওয়া রিপাবলিকান পার্টির ছয় কংগ্রেসম্যানের চিঠি সংগ্রহ করে পৃথকভাবে তার জবাব দিয়েছেন মন্ত্রী মোমেন। এসব চিঠিতে তিনি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি এই ১২ কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বৈঠকের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
কংগ্রেসম্যানদের চিঠি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, চিঠির উত্তর তো হোয়াইট হাউস দিয়ে দিয়েছে। হোয়াইট হাউস বলেছে, তাদের কংগ্রেসম্যান-সিনেটররা অনেক সময় প্রেসিডেন্টকে চিঠি লেখেন। সেই চিঠিগুলো আমরা গোপনে পড়ে গোপনীয়তা রক্ষা করে তার উত্তর জানিয়ে দেই। এই চিঠির ক্ষেত্রেও তারা সেটা জানিয়ে দিয়েছে। তাদের নিজেদের মধ্যকার কথাবার্তা আমাদের কেন জানা দরকার- এ বিষয়টিও হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ব্যাখ্যা করেছেন।
চিঠিটি কোনোভাবে লিক হয়েছে এমনটা জানিয়ে সভাপতি বলেন, এই চিঠির বিষয়ে আমাদের রাষ্ট্রদূত স্টেট ডিপার্টমেন্টকে ব্রিফ করেছেন। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে চিঠির মাধ্যমে উত্তর দিয়েছেন। সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করা হয়েছে।
ফারুক খান বলেন, আমরা সবাইকে জানিয়েছি। বারবার জানিয়েছি যে বাংলাদেশে তারা যে ল্যাক অব ডেমোক্র্যাসি, হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশন এবং এই ধরনের কিছু বিষয়ের অবতারণা করেছেন। তার প্রতিটির জবাব দিয়েছি। আমরা প্রমাণসহ দিয়েছি কী কী হয়েছে। কাজেই এ ব্যাপারে তাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ দলিল এখন আছে। আগামী নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য খুবই স্পষ্ট। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় ওইভাবে নির্বাচন হবে।
সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপিত মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৮ জুন মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ছয় কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে পত্র লিখেছেন। এ ছাড়া ২৫ মে মার্কিন রিপাবলিকান পার্টির ছয় কংগ্রেসম্যান একইভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের কাছে পত্র দিয়েছেন। রিপাবলিকান পার্টির ওই কংগ্রেসম্যানরা বাংলাদেশ সম্পর্কিত বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন অতীতে এমন নজির দেখা যায়নি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ওই চিঠি দুটির কোনোটিই বাংলাদেশ দূতাবাস তথা বাংলাদেশ সরকার বরাবর লেখা হয়নি। এরপরও বাংলাদেশ দূতাবাস ওই চিঠির অনুলিপি সংগ্রহ করে এবং সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট কংগ্রেসম্যানদের দপ্তরে যোগাযোগ করেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ দূতাবাস ওই ১২ কংগ্রেসম্যানের একাধিকের দপ্তরে কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইতোমধ্যে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছে ও তাদের পত্রের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এবং হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।