তাসলিমুল হাসান সিয়াম,গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
গাইবান্ধায় চরম ঝুঁকি নিয়ে চলছে সিএনজিচালিত তিন চাকার অটোরিকশা। তাতে অবাধে ব্যবহৃত হচ্ছে রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপি গ্যাস সিলিন্ডার। এতে বিস্ফোরণের মতো বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকায় নীরব বোমা’য় পরিণত হয়েছে এসব যানবাহন।চালকদের দাবি, বোতলে গ্যাস ভরার জন্য বগুড়ায় যাতায়াত করতে হয়রানি ও অতিরিক্ত চাঁদা দিতে হয়। এজন্য বাধ্য হয়ে গাড়িতে ঝুঁকিপূর্ণ এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন তারা।

জানা যায়, গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে গোবিন্দগঞ্জের নাকাইহাট, সাঘাটা, ফুলছড়ি, সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্যাপুর ও পলাশবাড়ী সড়কে প্রতিদিন কয়েক শতাধিক সিএনজি চলাচল করে। একটি অটোরিকশার পেছনের সিটে তিনজন ও সামনে চালকের সঙ্গে দুজন যাত্রী নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে চলাচল করছে এসব অটোরিকশা।

এ ধরনের সিলিন্ডার ঝাঁকুনি ছাড়া সুরক্ষিত স্থানে রাখার নিয়ম থাকলেও গাড়িতে প্রতিনিয়ত ঝাঁকুনির ফলে যেকোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণ হয়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। অটোরিকশার সিএনজি সিলিন্ডার মূলত প্রকারভেদে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায় কিনতে হয়। এতে গ্যাস রি-ফিলিং করলে এক-চতুর্থাংশ বাতাস থাকলেও সিলিন্ডারটি নিরাপদ থাকে। এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ৭৫০ টাকায়ই কেনা যায়। তাতে বাতাসের পরিমাণ থাকে না। কিন্তু সিলিন্ডার কোনোক্রমেই নিরাপদ নয়। এলপি গ্যাস সহজলভ্যতার কারণেই এর ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলছে আর যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকিও বাড়ছে।

জানা যায়, রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপিজিতে থাকে মূলত প্রোপেন বা বুটেন। সহজে বাতাসে মিশতে চায় না এই গ্যাস। তার ওপর সামান্য বাতাসের সংস্পর্শে এই গ্যাস জ্বলতে সক্ষম। অনেক সময় উঁচু-নিচু রাস্তায় ঝাঁকির কারণে সিলিন্ডারের মুখে ব্যবহৃত রেগুলেটরও মিসিং হতে পারে। সিলিন্ডারের মুখের রেগুলেটর মিসিং হলে গ্যাস লিকেজ হয়ে অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা খুবই বেশি।

গাইবান্ধার বিভিন্ন রুটের ইজিবাইক চালকরা জানান, সিএনজি গ্যাসের বোতল ভরানোর জন্য যেতে হয় পার্শ্ববর্তী জেলা বগুড়ায় আর সেখানে যাতায়াত করতে নানা হয়রানির পাশাপাশি নামে বেনামে বিভিন্ন সংগঠনকে গাড়ি প্রতি ২০০-৩০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। সম্প্রতি জেলা শহরে সিএনজি ফিলিং স্টেশন হলেও ওজনে কম দেয়া ও মিটার ব্যবস্থা নেই। বাধ্য হয়ে ক্ষতির বিষয়টি জেনেও এলপি গ্যাস সিলিন্ডার দিয়েই গাড়ি চালানো হচ্ছে।

সড়কে বিকল্প কোনো যানবাহন না থাকায় জীবনের ঝুঁকির কথা জেনেও এসব গাড়িতে বাধ্য হয়েই চলাচল করতে হচ্ছে বলে জানান যাত্রীরা। আব্দুল করিম নামে এক যাত্রী বলেন, অফিস যেতে হলেও গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। সেজন্য বাধ্য হয়ে এসব গাড়ি ব্যবহার করতে হয়।

ঝুঁকি নিয়ে এসব যানবাহন চলাচল সম্পর্কে জানতে চাইলে বিআরটিএ গাইবান্ধা সার্কেলের সহকারী পরিচালক মো. রবিউল ইসলাম জানান, বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত এলপি গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালানো আইনত অপরাধ। যাত্রীদের এসব ঝুঁকিপূর্ণ গাড়ি পরিহার করা উচিত। যারা এ ধরনের কাজ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version