অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে কাঁচা মরিচের দাম। প্রতি দিনই নিত্যপ্রয়োজনীয় এ সবজিটির দাম বাড়ছে। রাজধানীতে বাজারভেদে প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা উঠেছে কাঁচা মরিচের দাম।
ক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে জোগান কমে যাওয়ায় কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এ দিকে দুই মাস আগেও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। এরপর নানা উত্থান-পতনের পরে গত সপ্তাহে নিম্ন আয়ের মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণের এই প্রধান পণ্যটি বিক্রি হয় ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবারো বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। শুক্রবার এটি বিক্রি হয়েছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে। একইসাথে বেড়েছে ডিমের দাম। গত সপ্তাহে ১৩৫ টাকা ডজন বিক্রি হওয়া ডিম গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা ডজন। আগে থেকেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। নিত্যপণ্যের এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। গতকাল রাজধানীর বাজারঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
রামপুরা, মধুবাগ ও মালিবাগ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, এক দিকে কোরবানির কারণে চাহিদা বেড়েছে, অন্য দিকে বৃষ্টির কারণে জোগান কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।
রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কাওরানবাজারের সবজিবিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে মরিচের সরবরাহ কমে গেছে। তাই দাম বেড়েছে।
গতকাল খিলগাঁওয়ে বাজার করতে আসা মুনজুরুল বলেন, তেল, চিনি, ডালের মতো আমদানিনির্ভর পণ্যের দাম যে হারে বেড়েছে, ভেবেছিলাম বাজেটে সেসব পণ্যের দাম সহনীয় করতে কোনো না কোনো পদক্ষেপ থাকবে। কিন্তু নেই বরং দেখলাম, অনেক পণ্যের দাম বাড়ছে। সেজন্য বলা যায় বাজেট আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতার জন্য কোনো সুখবর নিয়ে আসেনি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের পর থেকে দফায় দফায় দাম বেড়ে আলু এখনো প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই অবস্থা পেঁয়াজ ও আদার দামেও। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বাজারভেদে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা আর আদার দাম বাড়তে বাড়তে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি পর্যন্ত উঠেছে। এ দুই পণ্যের দাম রমজানের ঈদের পর থেকে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।
এদিকে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আগে থেকেই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে তেল, চিনি, আটা-ময়দা। পাশাপাশি আছে কিছু পণ্যের সরবরাহ সঙ্কটও। যেমন- প্যাকেটজাত চিনি ও ময়দা বেশির ভাগ দোকানে নেই। বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও মুদি দোকানিরা বলছেন ঘাটতি আছে। দুই সপ্তাহ ধরে বেশির ভাগ তেল-চিনি পরিশোধনকারী কোম্পানি নতুন করে পণ্য সরবরাহ করেনি। দ্রুত সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এসব পণ্যের দাম আরো বাড়তে পারে বলে শঙ্কা খুচরা ব্যবসায়ীদের।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পটোল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০, ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৬০, বেগুন ৬০ থেকে ৭০, ঝিঙ্গা ৮০, বরবটি ৭০, কাঁকরোল ৭০, মিষ্টিকুমড়া ৩৫, পেঁপে ৬০, করলা ৭০, টমেটো প্রতি কেজি ৪০, মুলা ৬০ ও শসা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। অন্যদিকে চালকুমড়া প্রতিটি ৬০, গাজর প্রতি কেজি ৭০, কচুরলতি ৬০, লাউ প্রতিটি ৭০, কাঁচাকলা প্রতি হালি ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির উত্তাপ এখন ছড়িয়েছে মাছের বাজারেও। প্রকারভেদে সাধারণ চাষের মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৫০ থেকে ২০০ টাকা। প্রতি কেজি পাঙ্গাশ ১৯০-২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া মাছের কেজি হয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকায়। তাজা রুই, কাতলা, মৃগেল বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি দরে। দেশী প্রজাতির টেংরা, শিং, গচি ও বোয়াল মাছের কেজি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে পাটশাক জোড়া আঁটি ৩০, কলমি শাক জোড়া আঁটি ২০, কচু দুই আঁটি ২০, লাল শাকের জোড়া আঁটি ৩০, পুঁইশাক ৩০ টাকা, শাপলা ডাঁটা ১০, ডাঁটাশাক ১০, সবুজ ডাঁটা ২০ টাকা আঁটিতে বিক্রি হচ্ছে। আর ধনেপাতা ১০০ গ্রাম ৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ফরিদপুরে কাঁচা মরিচের কেজি ৮০০ টাকা
ফরিদপুরে গতকাল জেলা সদরের বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি ৮০০ টাকা ছুঁয়েছে। সকালে শহরের অম্বিকাপুরে এ দামই হাঁকা হয়েছে এক কেজি কাঁচা মরিচের। শহরের বাজারে পাইকারি আড়তে কাঁচা মরিচ ৬০০ টাকা কেজি আর খুচরা বাজারে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে বলে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। জেলার মধুখালীকে কৃষক পর্যায়ে এক মণ কাঁচা মরিচের দাম সাড়ে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
শহরের আলীপুর নিবাসী ওয়ালি নেওয়াজ বাবু বলেন, সকালে তিনি বাড়ির পাশে অম্বিকাপুর বাজারে যান মরিচ কিনতে। এ সময় এক বিক্রেতার কাছে দাম জানতে চাইলে তিনি এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম চাওয়া হয়েছে ৮০০ টাকা। পাশের আরেকজন বিক্রেতা চেয়েছেন ৭০০ টাকা কেজি।
বাবু বলেন, তিনি এ অবস্থা দেখে শহরের হাজি শরিয়তুল্লাহ বাজারে চলে যান। সেখানে দাম জানতে চাইলে তার কাছে ৭০০ টাকা চাওয়া হয় এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম।
বাজারের আড়তে গতকাল এক কেজি কাঁচা মরিচ পাইকারি দরে ৫৬০ টাকা বিক্রি হয়। বোয়ালমারীতে দুপুরে এক কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা দরে।
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি কাঁচা মরিচের আবাদ হয়। মধুখালীর মেগচামী গ্রামের বাসিন্দা ইনামুল খন্দকার বলেন, পাইকারি বাজারে কৃষকরা এক মণ কাঁচা মরিচ ২০ হাজার থেকে ২০ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছেন।
তিনি বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতে প্রচণ্ড খরার কারণে মরিচের তেমন ফলন হয়নি। এরপর গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কাঁচা মরিচের গাছ মরে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ক্ষেতের গাছে এখন মরিচ নেই। এজন্য দাম বেড়ে গেছে।
সূত্র জানায়, ঈদের ছুটিতে এক দিকে সংশ্লিষ্ট দফতরের লোকবল ছুটিতে থাকায় এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর চামড়ার বাজার নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এদিকে নজর দিতে পারেনি। বর্তমানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে মাত্র একজনই রয়েছেন।জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সোহেল শেখের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে অনেকের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, বিষয়টি কৃষি বিভাগের তদারকি করার কথা, কেন দাম বাড়ছে আমাদের মাত্র একজন কর্মকর্তা রয়েছেন। তাও এখন চামড়ার বাজার নিয়ে ব্যস্ত। তারপরও বাজারে খোঁজখবর নিয়ে দেখব এবং প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।