কক্সবাজার থেকে কে এম নুর মোহাম্মদ।
পবিত্র ঈদুল আযহায় জেলায় দেড় লাখ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হচেছ। তবে চাল বরাদ্দ গত বছরের তুলনায় কমে যাওয়ার কারণে এ বছর প্রায় ৫০ হাজার পরিবার বাদ পড়েছে। এ কোরবানের ঈদে জেলার ৭১ ইউনিয়নে এবং ৪ পৌরসভায় ১ লাখ ৪০ হাজার ৮১৭টি পরিবারের জন্য ১৪০৮ মে.টন চাল বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন ৪ পৌরসভা ও ৭১ ইউনিয়নের জন্য প্রদত্ত বরাদ্দ প্রায় সকল ইউনিয়ন পরিষদে এবং পৌরসভায় পৌছোনো হয়েছে এবং জনপ্রতিনিধিদের বিতরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামি সপ্তাহের মধ্যে দরিদ্রদের কাছে চাল পৌছে দেয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জেলা ত্রান ও পূর্ণবাসণ র্কাযালয় সূত্রে জানা যায়, পবিত্র ঈদুল আযহায় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের বিশেষ বরাদ্দের আওতায় অসহায় দুঃস্থ জনগোষ্ঠির জন্য কোরবানের ঈদ উপলক্ষ্যে ভিজিএফ কর্মসূচিতে জেলায় সাড়ে ৭ লাখ গরীব প্রান্তিক মানুষের জন্য ১ হাজার ৪শ ০৮ মে.টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে । এতে প্রতি পরিবার ১০ কেজি করে চাল পাচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলার ৭১ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের উপকারভোগিদের তালিকা প্রস্তত করে বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ শুরু করেছে। গত ২০ জুনের মধ্যে চাল উত্তোলনের শেষ দিন বলে বরাদ্দপত্রে উল্লেখ করা হয়।
জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় উপকারভোগিদের তালিকা প্রনয়নে যে গুরুত্বপূর্ণ ১২টি বিষয় মানতে জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয় তাদের অন্যতম হল-দুঃস্থ ,অতিদরিদ্র, ব্যক্তি/পরিবারকে এ সহায়তা দিতে হবে, তবে বন্যায় আক্রান্তদের কিংবা অন্যান্য দূর্যোগে পতিতদের অগ্রাধিকার দিতে হবে, ৭০ শতাংশ মহিলা তালিকাভুক্ত করতে হবে, ভুমিহীন, দিনমজুর, উর্পাজনক্ষম পুরুষবিহীন পরিবার, স্বামী পরিত্যাক্ত, তালাকপ্রাপ্ত, ভিক্ষাবৃত্তির উপর নির্ভরশীল, অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা, প্রাকৃতিক দূর্যোগে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ , দুবেলা বছরের অধিকাংশ সময় যে পরিবার ভাত পায়না তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে তালিকাভুক্ত করতে হবে।
উপজেলা ভিত্তিক উপকারভোগির সংখ্যা এবং চাল বরাদ্দের পরিমান হলো – চকরিয়ায় ১৮ ইউনিয়নে ১৮,৩৫০ কার্ডের তথা পরিবারের জন্য ১৮৩.৫০০ মে.টন। কক্সবাজার সদরের ১০ ইউনিয়নের ১১,৬৬২ পরিবারের জন্য ১১৬.৬২০ টন। কুতুবদিয়ায় ৬ ইউনিয়নের ৬১৪৩ পরিবারের জন্য ৬১.৪৩০ মে.টন। মহেশখালীর ৮ ইউনিয়নের ১৭,৮০২ পরিবারের জন্য ১৭৮.০২ মে.টন। পেকুয়ার ৭ ইউনিয়নের ৭৭৯৫ পরিবারের জন্য ৭৭.৯৫০ মে.টন। রামুর ১১ ইউনিয়নের ১৪,৪৮৫ পরিবারের জন্য ১৪৪.৮৫০ মে.টন। টেকনাফের ৬ ইউনিয়নের ১৮,১১০ পরিবারের জন্য ১৮১.১০০ মে.টন। উখিয়ার ৫ ইউনিয়নের ২৭,৯৮৬ পরিবারের জন্য ২৭৯.৮৬০ মে.টন চাল । কক্সবাজার পৌরসভার ৪৬২১ পরিবারের জন্য ৪৬.২১০ টন, চকরিয়া পৌরসভার ৪৬২১ পরিবারের জন্য ৪৬.২১০ টন, মহেশখালী পৌরসভার ৪৬২১ পরিবারের জন্য ৪৬.২১০ টন এবং টেকনাফ পৌরসভার ৪৬২১ পরিবারের জন্য ৪৬.২১০ টন।
ভিজিএফ এর চাল বিতরণ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গির আলম জানান, জেলার ৭১ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং ৪ পৌরসভার মেয়র বরাবরে সব চাল পৌছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপজেলার ভিজিএফ কমিটি বৈঠক বসে বরাদ্দ বিষয়ে সিদ্বান্ত নেবেন। তালিকা তৈরীতে যেন স্বজনপ্রীতি করা না হয় সে বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশাকরি প্রকৃত দরিদ্ররা বরাদ্দের চাল পাবে।
অপরদিকে সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোঃ জাকারিয়া জানান- ভিজিএফ চাল বিতরণে কোন ধরনের অনিয়ম কঠোর হস্তে দমন করা হবে। স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম, ওজনে কম দেয়া সব বিষয়ে ট্যাগ অফিসারদের নজরদারি বাড়ানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। আগামি ৩/৪ দিনের মধ্যে সদরের সব ইউনিয়নে চাল বিনরণ শেষ হবে। আমরা মাঠে সব পরিষদকে নজরদারীতে রেখেছি। কোন অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেননা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অসহায়দের মুখে হাসি ফোটাতে মুলত ঈদের আগে এ ১০ কেজি করে সব পরিবারে চাল দিচ্ছেন।
চাল বিতরণের প্রস্তুতি বিষয়ে ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় পরিবারে ঈদের আগে হাসি ফোঁটাতে ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। বরাদ্দপত্র হাতে আসা মাত্রই তালিকা প্রণয়নে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে মেম্বারগণকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে নির্দেশ দিয়েছি। আগামি শনিবারের মধ্যে আশাকরি বিতরণ শেষ করতে পারব। তিনি চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে বলেন সময়েে সাথে দরিদ্র অসহায়ের চাহিদা বেড়েছে কিন্তু গত বছরের তুলনায় বরাদ্দ কমেছে। তিনি বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান।
সরকার ঈদে দরিদ্রদের মুখে হাসি ফুটাতে উক্ত ভিজিএফ কর্মসূচি চালু করেছে যার সফলতা নির্ভর করছে জনপ্রতিনিধিদের সততার উপর। দরিদ্রদের চাল যেন সঠিক উপকারভোগি পায় সে বিষয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।