সিরিজের একমাত্র টেস্টে বড় সংগ্রহের পথে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসেও সাচ্ছন্দ্যেই রান আসছে। কোনো অঘটন না ঘটলে পাহাড়সম একটা লক্ষ্য ছুড়ে দেয়ার সম্ভাবনা সফরকারী আফগানিস্তানের সামনে। ইতোমধ্যেই লিড দাঁড়িয়েছে ৩৭০ রানে। ছন্দপতন না হলে বড় কিছুর আশা দেখতেই পারে বাংলাদেশ।
মিরপুরের এ ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে কে বলবে, একই মাঠেই প্রথম দুই সেশনে ১৬ উইকেট হারিয়েছে উভয় দল মিলে! দ্বিতীয়বার ব্যাট কতে নেমে দ্রুত গতিতে রান তোলায় মন দেন টাইগাররা। দ্রুত রান তুলতে গিয়ে শুরুতেই মাহমুদুল হাসান জয়ের উইকেট হারালেও তা এগিয়ে যেতে বাধা হয়নি।
নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকির হাসান মিলে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে সঠিক পথেই রেখেছেন দলকে। প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হওয়া জাকির হাসান দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করছেন টি-টোয়েন্টি মেজাজে, তিন অংকের কাছাকাছি স্ট্রাইকরেটে। শান্ত খেলতে থাকেন প্রথম ইনিংসের মতোই, সেই ছন্দেই। ফলে ধীরে ধীরে জমে উঠেছে দুজনের জুটি। ১৩০ বল থেকে দুজনে মিলে আদায় করেছেন ১১৬ রান। দলীয় সংগ্রহ ১ উইকেটে ১৩৪।
দুইজনেই পেয়েছেন অর্ধশতকের দেখা। আগের ইনিংসে ৫৮ বলে অর্ধশতক স্পর্শ করলেও আজ শান্ত অর্ধশতক ছুঁয়েছেন ৬১ বলে। তবে আরো একধাপ এগিয়ে জাকির হাসান, মাত্র ৫৬ বলে ফিফটি পূরণ করেন এই ব্যাটার। তিন ম্যাচের ক্যারিয়ারে যা তার দ্বিতীয় অর্ধশতক। শান্ত-জাকির, উভয়ের সামনেই আছে শতকের সুযোগ। দুজনেই অপরাজিত আছেন ৫৪ রানে।
এর আগে ৫ উইকেটে ৩৬২ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করে বাংলাদেশ। তবে ২০ রান যোগ করতেই শেষ ৫ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। প্রথম দিন দারুণ ব্যাট করা মুশফিক ৪৭ ও মিরাজ ৪৮ রান করে আউট হন। ৫ উইকেট শিকার করেন আফগানিস্তানের নিজাত মাসুদ।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র দেড় শ’র আগেই গুটিয়ে যায় আফগানিস্তানের ইনিংস। ৩৯ ওভার ব্যাট করে মাত্র ১৪৬ রানে আসে। সুবাদে ২৩৬ রানের বিশাল লিড পায় বাংলাদেশ। তবে সফরকারীদের ফলোঅন না করানোর সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস।
দলীয় ১৮ রানে প্রথমবার উইকেট উদযাপনের সুযোগ পায় বাংলাদেশ। ইবরাহীম জাদরান ও আব্দুল মালিকের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন শরিফুল ইসলাম। ১৭ বলে ৬ রান করা ইবরাহীম জাদরানকে ফেরান তিনি। পরের ওভারেই আব্দুল মালিককে জাকির হাসানের ক্যাচে পরিণত করেন এবাদত হোসেন। মাত্র ২৪ রানে ২ উইকেট হারায় আফগানিস্তান।
এরপর ১১ রান যোগ হতেই তৃতীয় উইকেটের পতন হয় সফরকারীদের। রহমত শাহকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান এবাদত। ৯ রান আসে তার ব্যাটে। সমান ৯ রান করে ফেরেন আফগান অধিনায়ক হাশমতুল্লাহ শাহিদী। তাকে মিরাজের ক্যাচ বানান শরিফুল ইসলাম। ৫১ রানে ৪ উইকেট হারায় আফগানিস্তান।
যদিও পঞ্চম উইকেট জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে আফগানরা। দলের হাল ধরেন নাসির জামাল ও আফসার জাজাই। দ্রুত গতিতে রান বের করতে থাকেন দু’জনে। তবে বেশিদূর যেতে পারেনি সেই জুটি। বাঁধা হয়ে দাঁড়ান মেহেদী মিরাজ। নাসির জামালকে ফিরিয়ে ভাঙেন ৬৫ রানের জুটি। ৩৫ রান করেন জামাল।
পরের ওভারেই ভয়ংকর হতে থাকা আরেক ব্যাটার আফসার জাজাইকে ফেরান এবাদত। ৪০ বলে ৩৬ রান করা এই ব্যাটারকে শরিফুলের ক্যাচ বানান তিনি। ১১৬ রানে ৬ উইকেট হারায় আফগানরা। সপ্তম উইকেটের দেখা পেতেও দেরি হয়নি। দলীয় ১২৭ রানে এবাদত আমির হামজাকে ফেরালে বেরিয়ে আসে আফগানদের ইনিংসের লেজ।
লেজে জোড়া আঘাত করেন তাইজুল ইসলাম। ইয়ামিন আহমাদজাইকে কোনো রান করার আগেই ফিরিয়ে প্রথম উইকেটের দেখা পান এই স্পিনার। অতঃপর নিজাত মাসুদকেও শূন্য রানে ফেরান তিনি। আর শেষে করিম জানাতকে (২৩) ফিরিয়ে ইনিংসের ইতি টানেন মেহেদী মিরাজ। যা তা তার ক্যারিয়ারের ১৫০তম টেস্ট উইকেট।
বাংলাদেশের পক্ষে এবাদত হোসেন ৪টি, তাইজুল, মিরাজ ও শরিফুল নেন দুটো করে উইকেট।