নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়ন পরিষদ ও হাটের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে এক প্রধান শিক্ষকসহ স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে।
ইউনিয়ন পরিষদের ওই জায়গায় কৃষি বিভাগের শস্য গুদাম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের চাষীক্লাব, গনশৌচাগার, হাটের শেড, কাঁচা বাজার ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চার জনের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ করেছেন ঝুনাগাছ চাপানী ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
অভিযুক্তরা হলেন-মিলন পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন, তোফাজ্জল হোসেন,দুলাল রায় ও আব্দুর রাজ্জাক। তারা ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের বাসিন্দা।
অভিযোগে বলা হয়েছে, উপজেলার চাপানি বাজার এলাকায় ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের এক একর জমি পরিষদের মালিকানাধীন।সর্বশেষ হোল্ডিং ও খতিয়ান মূলে ইউনিয়ন পরিষদ ওই জমির খাজনা পরিশোধ করে আসছে। ১৯৬২ সাল থেকে সেখানে কৃষি বিভাগের শশ্য গুদাম ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের চাষীক্লাব রয়েছে। এছাড়া সরকারি গন শৌচাগার ও হাটের সেড রয়েছে সেখানে।
সম্প্রতি প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিনসহ অভিযুক্তরা পরিষদের ১৬ শতক জমি দখল করে দোকানঘর নির্মাণের উদ্দেশ্যে টিনের চালা নির্মাণ ও পাকা খুঁটি স্থাপন করেছেন। এতে ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ ও বাজারের ব্যাবসায়ীরা বাধা দিলেও তারা জোরপূর্বক জমি দখল করে চারপাশে বাঁশের বেড়া দেয়।
ব্যাবসায়ীদের অভিযোগে বলা হয়েছে, যুগযুগ ধরে উত্তরাধিকার সূত্রে পরিষদের সরকারি জায়গায় ব্যবসা করছি । সম্প্রতি কিছু ভুমিদস্যু আমাদের দোকানপাট উচ্ছেদের হুমকি দিচ্ছে। একাজে তাদেরকে সহায়তা করছে সরকারি কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী।
সরেজমিনে ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের পুরাতন ভবন ও বেশ কিছু সরকারি স্থাপনা দখল করে চারপাশে বাঁশের বেড়া ও টিনের চালার ঘর করা হয়েছে। জায়গাটি দখল করে পিলার দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চাপানী বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃটিশ আমল থেকে এখানে ইউনিয়ন পরিষদের মুল কার্যালয় ছিল।পরে পাশেই নতুন ভবন হলে সেখানে পরিষদের কার্যক্রম স্থানান্তর হয়। পরিষদের পুরাতন ভবনটিতে শস্য গুদাম করা হয়েছে। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী জাল কাগজপত্র তৈরি করে অবৈধভাবে পরিষদের সরকারি স্থাপনাসহ জমি দখল করছে।
বাজারের ব্যাবসায়ী সহিদুল ইসলাম,মফিজুল, রমানাথ সহ অন্তত ২০ জন বলেন, আমরা বাপ-দাদার আমল থেকে পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন পরিষদের জায়গায় দোকান করে আসছি। ভুমিদস্যুরা হটাৎ করে মালিকানা দাবি করে জায়গা ছেড়ে দিতে হুমকি দিচ্ছে। তারা আমাদের দোকানঘরের উপরে জোরপূর্বক টিনের চালা দিয়েছে। পরে আমরা জেলা প্রশাসককে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
অভিযুক্তদের একজন প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, যে জায়গাটি নিয়ে বিরোধ হচ্ছে, সেটি আমাদের কেনা জায়গা। দলিল মুলে আমরা ওই জায়গার মালিক। এটা পরিষদের জমি না। উপজেলা সার্ভেয়ার কাগজপত্র দেখে জমি মেপে দিয়েছে। তাই ব্যবসায়ীদেরকে জায়গা ছাড়তে বলেছি।
ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী বলেন, পরিষদের জমি কারো ব্যক্তিগত সম্পদ নয়। এটা সরকার ও জনগণের সম্পত্তি। পরিষদটি অনেক পুরাতন। জমির কাগজপত্র পূর্ববর্তী চেয়ারম্যানগন ঠিকঠাক ভাবে সংরক্ষণ করেন নাই।এ সুযোগে কিছু মানুষ অবৈধ মালিকানা দাবি করছে। আশা করছি সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, কারো ব্যক্তিগত জমি মেপে দেওয়ার সুযোগ নেই। মাপজোক করা হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের জায়গা। এছাড়া সরকারি স্থাপনা কেউ দখল করতে পারে না। সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।