হযরত আলী,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
প্রায় চার বছর ধরে হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন সরকারি কলেজ হোস্টেল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে দূর-দূরান্তের গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীরা। ফলে তারা কষ্ট করে দশ-বার মাইল দূর থেকে নিয়মিত কলেজে আসতে হচ্ছে। আবার কেউ অন্য কোন ছাত্রাবাসে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। অনেক গরীর শিক্ষার্থীর সেই সামর্থ্যও নেই। ছাত্রাবাসটি বন্ধ থাকায় জরাজীর্ণ ও মাদকের আকড়ায় পরিনত হয়েছে। সন্ধ্যা হলেই মাদক সেবীদের আনাগোনা বাড়ে কলেজ হোস্টেলটিতে।
দীর্ঘদিন ধরে কলেজ হোস্টেল বন্ধ থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের এক দিকে পড়াশোনা ক্ষতি হচ্ছে, অন্য দিকে হোস্টেল বন্ধ থাকায় মাদক সেবিদের আনাগোনা বাড়ছে। এতে করে কলেজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। জরাজীর্ণ হোস্টেলটির আনাচে কানাচে ফেন্সিডিল এর খালি বোতল, মদের খালি বোতল যত্রতত্রে পড়ে আছে।
তবে, স্থানীয়দের দাবী কলেজ কতৃপক্ষের অবহেলা ও দেখভালের অভাবে হোস্টেলটির আজ বেহাল দশা। সন্ধ্যা হলেই মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ীদের রমরমা মাদক কারবারি শুরু হয়। এতে করে আমাদের যুব সমাজ আজ হুমকির মুখে। অন্যদিকে কলেজের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। আমরা চাই অতি দ্রত কলেজ হোস্টেলটি সংস্কার করে পুনঃরায় চালু করা হউক।
জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের কারনে কলেজ হোস্টেলটি বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও কলেজ কতৃপক্ষ হোস্টেলটি খুলে দিচ্ছেনা। এতে করে দূর-দূরন্ত থেকে আসা গরীর শিক্ষার্থী চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বাইরের ছাত্রাবাসে থোকে পড়াশোনা করতে অনেক খরচ। বাইরের ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করার মতো অনেক শিক্ষার্থীর সামর্থ্য নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটাই দাবি অতিদ্রত কলেজ হোস্টেলটি চালু করা হউক।
এ বিষয়ে আলিমুদ্দিন সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির প্রথম বর্ষের ছাত্র হাসিবুল বান্না বলেন, ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন আমার। আর এই স্বপ্ন নিয়ে এই কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছি। বাড়ি থেকে কলেজ প্রায় ১০ কিলোমিটার। প্রতিদিন বাড়ি থেকে কষ্ট করে কলেজ আসতে হয়। কলেজ হোস্টেলটি চালু করলে হোস্টেল থেকে আমরা লেখাপড়া করতে পাবো। দীর্ঘদিন ধরে কলেজ হোস্টেলটি বন্ধ থাকায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। তাই কলেজ হোস্টেলটি চালু করার দাবী জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে একাদশ শ্রেণির সাইন্সে পড়ুয়া শিক্ষার্থী রেজওয়ান নাইম বলেন, সাইন্স নিয়ে পড়াশোনা করলে সময়ের যে মূল্য তা বলে বোঝাতে পারবোনা। আমি অনেক দূর থেকে কলেজে আসি। কলেজে আসতে প্রায় দুই ঘন্টা সময় লাগে। হোস্টেল চালু করলে আমি হোস্টেল থেকে পড়াশোনা করতে পারবো। তাই কলেজ কতৃপক্ষকে কলেজ হোস্টেলটি সংস্কার করে চালু করার জোড় দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে আলিমুদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ন-আহবায়ক শাকিলুজ্জামান শাকিল বলেন, কোভিড-১৯ এর পর থেকে কলেজ হোস্টেলটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পরে আছে। যার কারনে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজ হোস্টেলে থাকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন মেসে অতিরিক্ত খরচে থাকতে হচ্ছে। এছাড়াও কলেজ হোস্টেলটি পরিত্যাক্ত থাকায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে সেখানে মাদক সেবীদের আসর বসে। আমি হাতীবান্ধা উপজেলা ছাত্রলীগ, সরকারি আলিমুদ্দিন কলেজ ছাত্রলীগ তথা সকল সাধারন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কলেজ প্রশাসনের কাছে দাবী জানাচ্ছি অতি দ্রত কলেজ হোস্টেলটি সংস্কার করে যেনো পুনঃরায় শিক্ষার্থীদের থাকার সুব্যবস্থা করাসহ মাদক মুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চত করতে হবে।
এ বিষয়ে আলিমুদ্দিন সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আনিছার রহমান বলেন, করোনা কালীন সময়ে কলেজ হোস্টেলটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এমত অবস্থায় কলেজ হোস্টেলটিতে শিক্ষার্থীদের থাকার অনুপোযোগি হলে হোস্টেলটি বন্ধ করে দেয়া হয়। বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছি পেলে সংস্কার করে আবার হোস্টেলটি চালু করা হবে।