সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
রিফাত। জামালগঞ্জ উপজেলার লম্বাবাঁক পশ্চিমপাড়া আব্দুস ছোবহান তালুকদার ও লালমিয়া তালুকদার নূরানীয়া মাদ্রাসার শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থী। বয়স ৫ পূর্ণ না হলেও ক্লাসের অন্য শিক্ষার্থীদের থেকে আলাদা রিফাত। সাবলীল উত্তর, দৃষ্টিভঙ্গি, কথোপকথনে যে কারো নজর কাড়বে। ভুল উত্তর হলেও শিক্ষকের সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়া, বাচনভঙ্গি ইত্যাদি অন্য শিক্ষার্থীদের থেকে আলাদা করেছে খুদে শিক্ষার্থী রিফাতকে।

সম্প্রতি রিফাতকে পাঠদানের সময় করা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে ইংরেজি সাত দিনের নাম, জাতীয় ফল, মাছ, ফুলের নাম জানতে চান শিক্ষক। সেগুলোরই চমৎকার উত্তর দেয় রিফাত। কিছু উত্তর ভুল হলেও বলার সময় আত্মবিশ্বাস সামাজিক যোগাযোগ মধ্যামের দর্শকের মুগ্ধ করেছে।
রিফাতের বাড়ি উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে। বাবা মুদি দোকানের কর্মচারী, মো. মহিবুর রহমান। পড়াশুনার জন্য সে নানার বাড়ি লম্বাবাঁগ গ্রামে থাকে।

রিফাতের নানা মো. আসমত আলী বলেন, রিফাত খুবই মেধাবী। কোনো কিছু শুনলে সাথে সাথে সে মুখস্ত করে ফেলে। লেখাপড়াতেও তার খুবই আগ্রহ। তার নানা হিসেবে এখানে গার্ডিয়ান এখন আমি।
মাদ্রাসায় পড়ানোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, সে পড়াশোনা করে বড় আলিম উলামা হলে আমি মরলে দোয়া করবো। এই আশা নিয়েই নাতিকে মাদ্রাসায় ভর্তি করেছি।

তিনি বলেন, মাদ্রাসার প্রতি সরকার একটু খেয়াল করলে আরও এগিয়ে যাবে। অনুদান পেলে শিক্ষার্থীরাও উৎসাহ পাবে।

মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ও পরিচালক ক্বারী আব্দুল কদ্দুস বলেন, রিফাতের মাঝে কিছু গুণ রয়েছে। তার কথাবার্তা ও চালচলন খুবই ভালো লাগে। তার মেধা আছে। আশা করি এক সময় সে অনেক বড় আলেম- হাফেজ হবে।

অন্যান্য শিক্ষার্থী থেকে রিফাত আলাদা সম্পর্কে বলেন, কোনো বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করলে পারুক আর না পারুক উত্তর দেয়ার চেষ্টা করে। এদিক দিয়ে অন্যদের থেকে আলাদা বললেই চলে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অল্প ক’জন শিক্ষার্থী নিয়ে সুরমা নদীর পাড়ে ছোট একটি মসজিদে ২০২১ সালে মাদ্রাসার কার্যক্রম শুরু হলেও এখন শিক্ষার্থী প্রায় একশ। শিশু ওয়ান, প্রথম ও দ্বিতীয়, এই তিন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান হয় মাদ্রাসায়। বাংলা, ইংরেজি, আরবি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান পড়ানো হয়। এখন শিক্ষার্থী বাড়ায় ভেতরে ও বারান্দায় ক্লাস চলে। পাশে একতলা ভবনের কার্যক্রম শুরু হলেও অর্থের অভাবে কয়েকটি পিলার ছাড়া আলোর মুখ দেখেনি উন্নয়নমূলক কাজ।

মাদ্রাসা চালাতে গিয়ে আর্থিক টানাপোড়ন সম্পর্কে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ও পরিচালক ক্বারী আব্দুল কদ্দুস বলেন, ছোট একটি মসজিদে ২০২১ সালের শুরু থেকে মাদ্রাসার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন প্রায় তিনটি শ্রেণিতে শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। শিক্ষার্থীদের জায়গা হয় না। একনটি ভবন হলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দূর হবে বলে জানান তিনি।

মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আতিকুর রহমান আতিক বলেন, আমি ৬ মাস ধরে এই মাদ্রাসায় পড়াচ্ছি। বাংলা, ইংরেজি ও গণিত পড়াচ্ছি। শুরু থেকেই দেখছি রিফাত পড়াশোনায় খুবই ভালো। সে পড়া ও লেখায় অন্যান্য শিক্ষার্থী থেকে ভালো। দোয়া করি সে বড় হয়ে বড় আলেম হোক।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version