সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জে অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় যমুনা টেলিভিশনের প্রতিবেদক আমিনুল ইসলাম কে মারধরের ঘটনায় যুবলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার চার্জশীট দিয়েছে পুলিশ। পুলিশের তদন্তে সাংবাদিক আমিনুলের উপর যুব লীগের কর্মীদের হামলার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদিপক্ষকে অবগত করেছে সদর মডেল থানা। রোববার পুলিশের দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়টি পত্রের মাধ্যমে যমুনা টেলিভিশন কে অবগত করাহয়।
অন্যদিকে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বেশকিছু ঘরের ভিত্তি নির্মাণের সময়ে ঘরের পিলারগুলোর নীচে রড না দেয়ার অভিযোগ তুলে ধরে যমুনা টেলিভিশনে প্রচারিত সংবাদের তদন্তে সত্যতা পেয়েছে জেলা প্রশাসনের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না হলেও ত্রুটিপুর্ণ এসব ঘরের বেইজে নতুন করে রড দিয়ে এগুলোকে সংশোধন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে সংবাদ প্রকাশের জেরে যমুনা টেলিভিশনের প্রতিবেদকের উপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী।
গত ৪ মে বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে যুবলীগ আহবায়ক খাইরুলহুদা চপলের সামনেই যমুনা টেলিভিশনের প্রতিবেদক আমিনুল ইসলামের উপর হামলা চালায় যুবলীগের কর্মীরা। এসময় তাকে বুকে ও মাথার পেছনে সজোরে আঘাত করতে থাকে যুব লীগের সদর উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সজিব ও অন্যান্যরা।
বুকের বা পাশে উপর্যুপরি আঘাত হওয়ায় গুরুত্বর আহত অবস্থায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম। এসময় হাসপাতালে গিয়েও আমিনুল কে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়ে টাকার বিনিময়ে সমঝোতার চেষ্টা চালান যুবলীগের আহবায়ক খাইরুলহুদা চপল, আহত আমিনুলকে চিকিৎসা নিতে না দিয়ে তার হাতে থাকা হাসপাতালের ব্যবস্থাপত্রও ছিনিয়ে নেন চপল। ঘটনাটি জানাজানি হলে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালায় শহরের প্রভাবশালী মহল।
এর আগে সকালে সদর উপজেলার লালপুর এলাকায় নির্মিতব্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ কাজে অনিয়ম বিষয়ে যমুনা টেলিভিশনের করা রিপোর্টে তদন্ত দল সেখানে যায়, তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রেভিনিউ) বিজন কুমার স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম কে তদন্তে সহায়তা করতে অনুরোধ জানালে তিনি সকালে ১০ টায় লালপুরে প্রকল্প এলাকায় গিয়েছিলেন, তদন্ত দলের উপস্থিতিতেই যুব লীগের খাইরুলহুদা চপল সাংবাদিক আমিনুল ইসলামের রিপোর্টে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ও তাকে উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন, সাংবাদিকদের তিনি ভাড়াটিয়া বলে মন্তব্য করলে আমিনুল তাৎক্ষণীক প্রতিবাদ জানান, এতে রাগান্বীত হয়ে উঠেন চপল, আমিনুলকে প্রকাশ্যেই শহরছাড়া করবেন বলে সকলের সামনেই হুমকি দেন চপল, পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করে তদন্ত কমিটি, এসময় চপল তার নিজ বলয়ের ছাত্র লীগ ও যুব লীগ সদস্যদেরকে খবর দিলে তদন্ত দলের উপস্থিতিতেই সেখানে মেটরসাইকেলযোগে জড়ো হতে থাকে উশৃংখ্যল যুবকরা, ছাত্র লীগের সভাপতি দিপংকর কান্তি দে সহ যুবলীগের কর্মীরাও ঘটনাস্থলে পৌছে সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম কে হেনস্থা করার চেষ্টা করতে থাকে, দুপুর ১২ টার দিকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে তদন্ত দল প্রকল্প এলাকা ত্যাগ করতে থাকে, এসময় চপল আমিনুলকে নিজের গাড়িতে করে পৌঁছে দেবেন বলে গাড়িতে উঠতে বলেন, তদন্ত দলের প্রধান নিজেও আমিনুলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চপলকে আহবান করেন, আমিনুলকে নিজের গাড়িতে তোলে নেন চপল, কিন্তু প্রকল্প এলাকা থেকেই চপলের গাড়ির সামনে ও পেছন পেছন শহরের দিকে আসতে থাকে মোটরসাইকেল যোগে জড়ো হওয়া যবলীগ ও ছাত্র লীগের যুবকরা, শহরের মল্লিকপুর এলাকায় এসে উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকের সামনে চপল গাড়ি থামিয়ে সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম কে গাড়ি থেকে নামতে বলেন, এসময় তিনি নামলেই মোটরসাইকেলে থাকা যুবকরা তাকে চপলের সামনেই আঘাত করতে শুরু করে, এরপর চপল গাড়ি থেকে নেমে নিজেই তাদের একটি মোটর সাইকেলে করে আহত আমিনুলকে হাসপাতালে পাঠান। ঘটনার পর হামলার বিষয়টি কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছিলেন চপল, যারা হামলা করেছে তাদের কাউকেও তিনি চেনেন না বলে গণমাধ্যম কে জানিয়েছিলেন, কিন্তু এই ঘটনায় গ্রেফতার হয় তারই ঘনিষ্ঠ অনুসারি যুবলীগের সুনামগঞ্জ সদর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক জিল্লুর রহমান সজিব। পরে তিনি ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন।
এ ব্যপারে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানা অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন ” মামলার পর পুলিশ অভিযুক্ত সজীবকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়, পরে তদন্ত করে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা চার্জ শীট দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন” আমরা চাই প্রকল্পগুলোতে যেনো কোন অনিয়ম না থাকে, যে অভিযোগ উঠে এসেছিলো সেগুলো তদন্ত করে আমরা বেইজগুলোতে যে সমস্যা ছিলো সেগুলো সংশোধন করেছি, নতুন করে কর্মকর্তা দায়িত্ব পেয়েছেন, আগে যারা কাজের সঙ্গে ছিলো তাদের পরিবর্তন করা হয়েছে।