শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু জ্বালানি তেল, কয়লা বা গ্যাসের অভাব সারা বিশ্বব্যাপী। এখন তো কেনাটাই অনেকটা মুশকিল। ক্রয় করাটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে কাতার ও ওমানের সাথে আমাদের চুক্তি সই হয়ে গেছে। আমরা জলবিদ্যুতও আমদানির ব্যবস্থা নিয়েছি। কয়লা কেনার জন্য ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যাতে বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো আমরা আবার চালু করতে পারি।
রোববার জাতীয় সংসদে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আফসারুল আমীনের মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। পরে তা সর্বসম্মতক্রমে গ্রহণ করা হয়।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের অতিমারি, এরপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে সমগ্র বিশ্বে যে খাদ্যমন্দা, মুদ্রাস্ফীতি, পরিচালনা ও পরিবহন ব্যয়, বিদ্যুতের ঘাটতি- এটা প্রত্যেকটি মানুষের জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। বাংলাদেশে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে স্বাধীনতার সুফল মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাচ্ছে। মানুষের আত্মসামাজিক উন্নতি হয়েছে। যদিও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, স্যাংশন, পাল্টা স্যাংশন, বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানী তেলের অভাব, যার জন্য এখন শুধু বাংলাদেশ নয়, উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে কিন্তু জ্বালানির অভাব হচ্ছে। সেখানে লোডশেডিং বা বিদ্যুত ব্যবহার সীমিত করা হচ্ছে। খাদ্যপন্য থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। উন্নত দেশেও বহু মানুষ চাকুরি হারাচ্ছে। এমন একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সারা বিশ্বব্যাপী। আমি জানিনা আর কখনো এরকম পরিস্থিতি হয়েছিল কী না। হয়তো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তো দুর্ভিক্ষ, মন্বন্তর দেখা দিয়েছিল।

সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাাসিনা বলেন, সবাইকে অনুরোধ করব বিদ্যুত ব্যবহারে একটু সাশ্রয়ী হতে হবে। সব জিনিস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। আমাদের খাদ্য উৎপাদনও বাড়াতে হবে। আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে। বিশ্বের এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি আর কতদিন চলতে তা কেউ বলতে পারে না। হয়তো বিশ্ব পরিস্থতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। তবে আমাদের দেশের মানুষের সুরক্ষার জন্য তাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আমাদের যা যা করণীয় তা করে যাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫-এর পর ২১টি বছর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। অনেক মুক্তিযোদ্ধারা পরিচয় দেয়ারও সাহস পেতে না। আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। সেই সংগ্রামে আফসারুল আমিনকে পেয়েছি। আওয়ামী লীগ আসার পর সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। দেশ গড়ার কাজে নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছেন।

প্রয়াত সংসদ সদস্য আফসারুল আমীনকে স্মরণ করে তিনি বলেন, তিনি ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগের সাথে জড়িত ছিলেন। প্রতিটি সংগ্রামে তিনি ভূমিকা রেখেছেন। নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। দলের প্রতি তার নিষ্ঠা ও সততা ছিলো অতুলনীয়। তিনি মন্ত্রী হিসেবেও অত্যন্ত সাফল্য দেখিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, এটা খুবই কষ্টের যে যেদিন সংসদ শুরু করলাম সেদিন শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করি। আজকে আবার শোকপ্রস্তাব জানাতে হচ্ছে। এবারের সংসদে আমরা এতজন সংসদ সদস্যকে হারালাম বোধহয় আর কখনো হয়নি।
আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা সব সময়ই দুর্গত মানুষের সেবা করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে মানুষ মারা গেছে। তৎকালীন বিএনপি সরকার জানেইনি যে ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। সবার আগে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা ছুটে যান।
শোক প্রস্তাবের ওপর অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, নুরুল ইসলাম নাহিদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ওয়াসিকা আয়শা খান, মোতাহার হোসেন এবং জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক ও মসিউর রহমান।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version