দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
শুকনো মৌসুমে ধান ক্ষেত ও বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি উঁচু-নিচু টিলা অথবা ধান ক্ষেতের আইল দিয়ে হাঁটু সমান কাঁদা মাড়িয়ে চলাচল করতে হতো ৪ গ্রামের প্রায় ৩ হাজার মানুষকে। অবশেষে এই ভোগান্তীর অবসান হয়েছে।
নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার ২নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের পাহাড়ি অঞ্চলের ৪টি গ্রামের মানুষের ভোগান্তী ছিল দীর্ঘদিনের। এবার ভোগান্তী লাঘবে মানুষের চলাচলের জন্য তৈরি করা হয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার মাটির রাস্তা। চলাচলের রাস্তা পেয়ে তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নও পূরণ হয়েছে।
জানা গেছে,২নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের ডাহাপাড়া,বাদাম বাড়ি,ভবানীপুর ও নলুয়াপাড়া এই ৪ গ্রামের প্রায় ৩ হাজার লোকের বসবাস থাকলেও তাদের জন্য যাতায়ায়াতের কোনো সুব্যবস্থা ছিল না। ঐ গ্রামের পরিবারগুলোর যাতায়াত করতে হতো ক্ষেতের আইল দিয়ে অথবা পাহাড়ি উঁচু-নিচু টিলার উপর দিয়ে। অবশেষে কষ্ট লাঘবে ইউনিয়ন পরিষদ এর অধীনে চায়না মোড় এলাকার ১নং টিলা হতে ডাহাপাড়া মোড় পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার মাটির রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। রাস্তাটির নামকরণ করা হয়েছে অধিগুনা বীর মুক্তিযোদ্ধা সড়ক।
এদিকে নির্মাণাধীন এ রাস্তা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান,উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ণ কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম,প্রেসক্লাব সভাপতি নির্মলেন্দু সরকার বাবুল,সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব হোসেন তালুকদার,উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পারভীন আক্তার,ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাদেকুল ইসলাম ও ইউপি সদস্যবৃন্দ।
ডাহাপাড়া গ্রামের জামাল মিয়া,সামিল সাংমা,হারুন মিয়াসহ একাধিক বাসিন্দা বলেন,আদিকাল থেকেই আমাদের পূর্ব-পুরুষরা এই গ্রামগুলোতে বসতি নির্মাণ করে বসবাস করে আসলেও যাতায়াতের জন্য রাস্তা ছিল না। ধান ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা কষ্টকর হওয়ায় কোনো জনপ্রতিনিধিই এতোদিন এগিয়ে আসেননি। যদিও একটি রাস্তার সপ্ন থাকলেও গ্রামবাসী ভাবতেও পারেন নি তাদের এই প্রত্যন্তঞ্চলে রাস্তা হবে। অবশেষে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। রাস্তা পেয়ে বেজায় খুশি পুরো ৪ গ্রামের শিক্ষার্থী,নারী-পুরুষ ও বৃদ্ধরা।
কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন,রাস্তা না থাকায় এ গ্রামের মানুষের চলাচলের জন্য অটোরিকশা,রিকশাতো দূরের কথা হেঁটে চলাচল করতেও কষ্ট হতো। গ্রামে রাস্তা না থাকায় জমি থেকে ফসল বাড়িতে নিতেও কষ্ট হতো। এমনকি গ্রামে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে খুব সমস্যায় পড়তে হতো।
ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাদেকুল ইসলাম বলেন, এ গ্রামের ভোক্তভোগী মানুষেরা আমার কাছে রাস্তা নির্মাণের দাবি করেন। এতদিন তারা মূল সড়ক থেকে বিছিন্ন ছিলো। তাই মূল সড়কের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত তাদের সপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। এ কাজে উন্নয়ন সহয়তার তহবিলের একটি বরাদ্দে দেড় কিলোমিটার ও বরাদ্দ ছাড়াই অগ্রিম নিজ অর্থায়নে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার মাটির রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান বলেন,পাহাড়ি প্রত্যন্তঞ্চলে যাতায়ায়াতের কোনো সুব্যবস্থা ছিল না। গ্রামবাসীর ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে অনেক। চেয়ারম্যানের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি পর্যটন এলাকা হওয়ায় এখানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন ঘুরতে আসেন। তাদের কথা চিন্তা করে ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কিছু পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে।
আপনি যা যা মিস করেছেন
Add A Comment