মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল নয় বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। অন্যদিকে চীন চায়, ‘বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও পুরো অঞ্চলের মঙ্গলের জন্য’ দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। গতকাল শনিবার ঢাকায় বাংলাদেশের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ের বৈঠকে দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দিয়েছে চীন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। চীনের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইতোং। দুই দফা বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়াও কানেক্টিভিটি, ইন্দো-প্যাসিফিক ও চীনের বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রথম দফা বৈঠকে রোহিঙ্গা, ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ে আলোচনা করা হয়। দ্বিতীয় বৈঠকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, কনস্যুলার সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং রাজনৈতিক সফর বিষয়ে আলোচনা করা হয়। চীনের ভাইস মিনিস্টার এমন একসময় ঢাকা সফর করছেন যখন বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি নিয়ে দৃশ্যত সরকার অস্বস্তিতে আছে। চীন জিডিআইয়ে বাংলাদেশকে পাশে চায়। বাংলাদেশও চীনের জিডিআই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাংলাদেশ গতকাল চীনকে জানিয়েছে, জিডিআইয়ে যোগ দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা স্মারকের খসড়া নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্ভাব্য চীন সফর নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে চীনা পক্ষ। তবে গতকালের বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইন্দো-প্যাসিফিক, জিডিআই, প্রধানমন্ত্রীর সফরের মতো বিষয়গুলোর উল্লেখ ছিল না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈঠকে উভয় পক্ষ রোহিঙ্গা সংকটসহ অন্যান্য বহুপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়েও আলোচনা করে। চীনা প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, টেকসই ও স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়াকে সহযোগিতা করার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেছে।চীনের ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইতোং বলেন, দ্রুত প্রত্যাবাসন বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং পুরো অঞ্চলের জন্য মঙ্গলজনক হবে। পাইলট প্রকল্পের আওতায় প্রথম ব্যাচের প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের মিয়ানমারে ‘গো অ্যান্ড সি’ (যাওয়া ও দেখা) সফর এবং বাংলাদেশে ‘কাম অ্যান্ড টক’ (ফিরে আসা ও কথা বলা) সফরের ব্যবস্থা করায় চীনা প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রোহিঙ্গা ইস্যু চীনের জন্য নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হওয়ার বড় সুযোগ এনে দিয়েছে। এরই মধ্যে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সমঝোতা করাতে পেরেছে চীন। এরপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রমাণ করতে পারলে সেটি চীনের জন্য ভালো একটি অর্জন হবে। এ কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে চীনের বিশেষ আগ্রহ আছে।