স্টাফ রিপোর্টার : নেত্রকোনা খালিয়াজুরীর মৃণাল কান্তি দেব নামে এক গণমাধ্যমকর্মীকে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করতে যান গণমাধ্যমকর্মী। ঊর্ধ্বতনের অনুমতির কথা বলে রবিবার-শুক্রবার ছয়দিনেও ভূক্তভোগীর আবেদন জিডি হিসেবে থানায় নথিভূক্ত করাতে না পারার অভিযোগ উঠেছে ওসি মো. খায়রুল বাশারের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী মৃণাল কান্তি দেব ‘দৈনিক সকালের সময়’ পত্রিকার খালিয়াজুরীর উপজেলা প্রতিনিধি। অন্যদিকে একই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হলেন রুয়েল সাংমা।
মৃণাল কান্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার সহকারি কমিশনারের (ভূমি) গাড়ী চালক নিয়োগে অর্থ লেনদেন এমন অভিযোগ জানতে পারেন। ‘আরটিভি’র জেলা প্রতিনিধি আলীমুল রাজি গজনবী বিপ্লবকে সাথে নিয়ে তথ্য সংগ্রহে চলতি মাসের ১২ তারিখ (শুক্রবার) সন্ধ্যায় চালক মোহাম্মদ লিমনের বাড়িতে যান গণমাধ্যমকর্মীগণ। ফেরার পথে রাত আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইউএনও তার অফিসিয়াল মোবাইলে (হোয়াটস অ্যাপস) ‘কোথায় আছেন, হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ দেখেন, টাকার বিনিময়ে কোথায় যাচ্ছেন, ষড়যন্ত্র মামলায় ফেঁসে যাবেন’ বলে মৃণালকে হুমকি দেন। পরেরদিন গণমাধ্যমকর্মী ইউএনও’র সাথে সাক্ষাতের সময় চাইলে দিতে পারবেন না বলে সংযোগ কেটে দেন। পরবর্তীতে মৃণাল মোবাইলে কয়েকবার ফোন দিলে ইউএনও ফোন ধরেননি। পরে হোয়াটস অ্যাপের মেসেজ বক্সে মৃণাল দেখেন আরটিভির জেলা প্রতিনিধির ভিজিটিং কার্ড। যেটি গাড়ী চালককে দেওয়া হয়েছিল এবং গাড়ী চালকের ঘরের কোন একটি কক্ষের পর্দার আড়াল থেকে তোলা তিনিসহ আরটিভি প্রতিনিধির ছবি। ইংরেজিতে ‘Apni kintu conspiracy te fese jaben..’ ও ‘Leap before you left…’ এমন দুই বাক্যের মেসেজ দেখতে পান মৃণাল।
শনিবার (১৩ মে) জিডি করার বিষয়ে ওসিকে মোবাইলে জানালে মৃণালকে দেখা করতে বলেন। রবিবার (১৪ মে) দুপুরের দিকে জিডির আবেদন জমা ও হোয়াটস অ্যাপের ক্রিনশর্ট ওসিকে দেখান। ওসি মৃণালকে বলেন এখন নেত্রকোনায় যাচ্ছি। এসপি স্যারেকে অবগত করে ডিউটি অফিসারকে বলে দিবেন জিডি রেকর্ড করতে। এরপর একাধিকবার ফোনে ও থানায় উপস্থিত হয়ে গত রবিবার-শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ছয় দিনেও জিডি রেকর্ড না হওয়ার দাবী ভূক্তভোগীর।
এ বিষয়ে খালিয়াজুরীর ওসি মো. খায়রুল বাশার জানান, তাকে (মৃণাল) জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে যেতে বলেছি। প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সরকারি কর্মচারী বিরুদ্ধে জিডি করতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয়। ডিসি মহোদয় বিষয়টা অবগত হয়ে গণমাধ্যমকর্মীকে তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেছেন।
খালিয়াজুরীর ইউএনও রুয়েল সাংমার অফিসিয়াল মোবাইলে একাধিকবার ফোন ও খুদেবার্তা পাঠিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান বলেন, ‘অভিযোগ তদন্ত ও জিডির কিছু বিষয় আছে আদালতের অনুমতি নিতে হয়। তবে সব বিষয়ে নয়’। নিরাপত্তা চেয়ে কোন নাগরিক জিডির করতে চাইলে ঊর্ধ্বতনের অনুমতি লাগে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জিডি করতে অনুমতি লাগে না’। পরে ইউএনও কর্তৃক গণমাধ্যমকর্মীকে হুমকি আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নাগরিক ও সরকারি অফিসারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। জিডি করাটাও একটা আইনগত ব্যবস্থা। সরকারি কর্মকর্তা হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে’।