বুধবার, জুন ২৬, ২০২৪

শতরঞ্জির কাজ করে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন লাইজু বেওয়া 

যা যা মিস করেছেন

তাসলিমুল হাসান সিয়াম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি: সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন ।তিন বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। তখন স্বামীর বাড়ি থেকে মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি আশ্রয় নেন গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের পারআমলাগাছী গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের স্ত্রী লাইজু বেওয়া । শিশু সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে হতাশায় পড়েন । তারপর এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে পলাশবাড়ী পল্লী উন্নয়ন বোর্ড থেকে শতরঞ্জির উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তারা তাকে শতরঞ্জির সরঞ্জামসহ কিছু নগদ টাকা প্রদান করেন। এভাবে শতরঞ্জির কাজের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে মাত্র ১৩ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করা লাইজু এখন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। শতরঞ্জির কাজ করে নিজের পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আনার পাশাপাশি তিনি আরও ১৫ জন নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।

  ।
২০১৪ সালে পলাশবাড়ী পল্লী উন্নয়ন বোর্ড থেকে ৬০ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের দেওয়া ১৩ হাজার টাকা ও শতরঞ্জির সরঞ্জাম নিয়ে হাতের মাধ্যমে পাপোস ও কার্পেট তৈরি করেন। এরপর পলাশবাড়ী মহিলা অধিদপ্তরের আয়োজনে ৭ দিনের আইজিএ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং এখান থেকেও ৭ হাজার টাকা অনুদান পান। ২০১৯ সালে গ্রামের ১৫ জন মহিলা নিয়ে দুই মাসের শিপ প্রজেক্টে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে স্থানীয় এনজিও গণ উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে শতরঞ্জির মেশিনসহ ৫০ হাজার টাকার চেক পান তিনি এরপর পাল্টে যায় সফল নারী উদ্যোক্তা লাইজুর জীবন।
২০২০ সালে তিনি গ্রামের মহিলাদের নিয়ে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্রের উৎপাদক দল গঠন করেন। তাদের দেওয়া মেশিন, সুতা ও দিয়ে পাপোস, কূশন, জায়নামাজ, ওয়ালমেট তৈরি করে বাজারজাত করেন। এসব পণ্য কারখানা থেকে ও গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ক্রেতারা এসে পাইকারি দরে কিনে নিয়ে যায়। এখন প্রতিমাসে লাইজু ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করছেন। তার কারখানায় কাজ করা বাকি সদস্যদেরও প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।
লাইজুর কারখানায় উৎপাদিত ১৮ বাই ২৪ সাইজের একটি পাপোস দুইশ টাকা, ২০ বাই ৩০ সাইজের তিনশ টাকা , জুট পাপোস ৬শ টাকা, ওয়ালমেট ৫শ টাকা মেঝের কার্পেট ফিট ডিজাইন অনুসারে ৯০ টাকা বিক্রি করা হয়। প্রস্তুত শেষে এসব পণ্য ঢাকা ,পলাশবাড়ী, গোবিন্দগঞ্জ ও রংপুরে যায় ‌।
 সম্পূর্ণ দেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে গার্মেন্টসের বর্জ্য জুট, কাঁচা পাট, পাটের সুতলি, রিসাইকেল সুতাসহ শতভাগ দেশি কাঁচামাল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের নকশা এবং বিভিন্ন সাইজের শতরঞ্জি পণ্য দিয়ে একই বুননে ওয়ালম্যাট, টেবিলম্যাট, কুশন কভার, সোফার রুমাল, জায়নামাজ, পাপোস কেবলমাত্র বাঁশ, কাঠ এবং রশি দিয়ে মাটির ওপর সুতো টানা দিয়ে প্রস্তুত করে প্রতিটি সুতা গণনা করে হাত দিয়ে নকশা করে শতরঞ্জি তৈরি করা হয়। কোনো জোড়া ছাড়া যে কোনো মাপের শতরঞ্জি তৈরি করা যায়। এর সৌন্দর্য দেখার মতো।লাইজুর শতরঞ্জি তৈরির কাজে যোগ দিয়েছেন প্রতিবেশী নারীরা ।
শতরঞ্জি প্রশিক্ষণ নিয়ে সালমা বেগম ও ফাতেমা সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। মাহমুদা বেগম, রিক্তা ও উর্মিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে লাইজুর শতরঞ্জি কারখানায় কাজ করছেন।
কারখানায় কাজ করা সালমা বেগম জানান, তার স্বামী পেশা একজন অটো চালক একজনের আয়ে সংসারে অভাব অনটন লেগেই ছিল এরপর লাইজু আপার সাফল্য দেখে তার সাথে কাজ করছি এখানে কাজ করার ধরাবাঁধা কোনো সময় নেই তাই সংসারের কাজের উপর কোন প্রভাব পড়ে না ।
লাইজু বেওয়া বলেন, আমার আজকের এই অবস্থানে আসতে বেশ কষ্ট অতিক্রম করতে হয়েছে। কিন্তু কখনো হাল ছাড়িনি। আমার মেয়ে এখন স্কুলে পড়ছে ওর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শতরঞ্জির কাজ শেখার পর এই কারখানা স্থাপন করেছি । এখান থেকে যা আয় তা দিয়ে আমাদের পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে । এখন আমার দেখাদেখি অনেক হতদরিদ্র নারী এই পেশায় আসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে । আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সাহায্য করছি ।
পলাশবাড়ী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ হাসানুজ্জামান জানান , লাইজু বেওয়ার মতো এমন অনেক অসহায় নারীদের ঘুরে দাঁড়াতে আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি । প্রশিক্ষণ শেষে তাদের ব্যবসার পুঁজি ও সরঞ্জাম দিয়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে সহযোগিতা করছি ।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security