প্রিয়জনের মৃত্যু আমাদের জীবনকে পুরোপুরি বদলে দেয়। এমনকি যাদের আমরা চিনি না জানি না সেই রকম হাজার হাজার মানুষ যারা প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারায় তাদের মৃত্যুও আমাদের চিন্তাধারার অনেক পরিবর্তন ঘটায়। মৃত্যু জীবনের এক বাস্তব সত্য। এই সত্যটা যখন আমরা উপলব্ধি করতে পারি, তখন যত্ন নেওয়ার বিষয়টি আমরা তা থেকে শিখতে পারি।

এক শিক্ষক আজান চাহ্‌ তাঁর হাতের সিরামিকের মগটি তুলে ধরে আমাকে দেখিয়েছিলেন, ‘এটার দিকে চেয়ে দেখো!’ তিনি বলেছিলেন, ‘এটার মধ্যে একটা চিড় আছে।’

আমি খুব কাছ থেকে ভালোভাবে কাপটির দিকে দেখেছিলাম, কিন্তু কোনো চিড় দেখতে পাইনি।
ওই চিড়টা এখন অদৃশ্য,’ আজান চাহ্‌ বললেন, ‘কিন্তু সেটা ওখানে রয়েছে। কোনো এক দিন কেউ ওটা হাত থেকে ফেলে দেবে আর চিড়টা তখন বেরিয়ে আসবে এবং আমার কাপটা ভেঙে যাবে। এটাই ওর নিয়তি।’

‘কিন্তু আমার মগটা যদি প্লাস্টিকের তৈরি হতো,’ আমার গুরু ব্যাখ্যা করে বললেন, ‘তাহলে সেটির নিয়তি এমনটি হতো না, এবং সেটি ভেঙেও যেত না। তুমি মনোযোগী না হলেও চলবে, কারণ সেটি ভঙ্গুর নয়। কিন্তু আমার কাপটা যেহেতু ভঙ্গুর, তাই সেটাকে অবশ্যই যত্ন করতে হবে।
ঠিক তেমনি,’ আজান চাহ্‌ জোর দিয়ে বলতে শুরু করলেন, ‘তোমার শরীরের মধ্যেও একটা চিড় আছে। সেই চিড়টা এখন দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু সেটা আছে সেখানে। একে বলা হয় ভবিষ্যতের মৃত্যু। একদিন একটা দুর্ঘটনা ঘটবে, কোনো রোগ কিংবা বার্ধক্য, তখন সেই চিড়টা বেরিয়ে আসবে এবং তুমি মারা যাবে। এটিই তোমার নিয়তি। কিন্তু তোমার জীবন যদি চিরস্থায়ী হতো,’ আজান চাহ্‌ শেষে বললেন, ‘তোমার জীবন যদি প্লাস্টিকের একটা মগের মতো অভঙ্গুর হতো, তাহলে তুমি অমনোযোগী হতে পারতে। আমাদের জীবন ভঙ্গুর বলে মৃত্যুই হচ্ছে আমাদের নিয়তি। আর এজন্যই জীবন সম্পর্কে অবশ্যই আমাদের মনোযোগী হতে হবে।’
সম্পর্কের ব্যাপারটা যেহেতু সিরামিক মগের মতোই ভঙ্গুর, তাহলে একে অপরের প্রতি এতো মনোযোগই বা আমরা কেন দেব। সুখের মধ্যে চিড় আছে বলেই, আমাদের কখনো ভাবা উচিত নয় যে আনন্দটাই চিরস্থায়ী। আমাদের জীবন একদিন শেষ হয়ে যাবে, এ কথা বুঝতে পারি বলেই জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত আমাদের কাছে এতো মূল্যবান।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version