কে. এম. সাখাওয়াত হোসন : নেত্রকোনা কেন্দুয়ার চিরাং বাজার ইজারা না দিয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে খাস কালেকশনের অন্তরালে প্রভাবশালীদের ইজারা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী জালাল ও চিরাং ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) বুলবুল আহমেদের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট ইউপির বাট্টার গ্রামের মৃত জানফর আলীর ছেলে মো. আবুল কাশেম (৫৫) এবং বাজারের সাবেক ইজারাদার ও একই গ্রামের মৃত নুর হোসেনের ছেলে সিরাজ খান (৬০) তারা চলতি মাসের ১০ তারিখ জেলা প্রশাসকের কাছে এমন অভিযোগ দাখিল করেন। এছাড়াও গত ১১ মে বাট্টা গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহান খান তিনিও জেলা প্রশাসকের কাছে একই অভিযোগ আনেন।
তাদের অভিযোগ, চিরাং বাজারটি কেন্দুয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ ও গরুর হাটের জন্য বিখ্যাত। বাংলা ১৪৩০ সনে কোন ধরনের নোটিশ বা মাইকিং না করে ইউএনও ও নায়েব তারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাথে আতাত করে বাজারটি খাস কালেকশন শুরু করেন। নায়েব সাহেব বাজারে উপস্থিত না থেকে সুবিধাভোগীরা অতিরিক্ত খাজনা আদায় করছে।
অভিযোগকারীরা নায়েবের কাছ থেকে জানতে পারেন, গত তিন সপ্তাহে তিন বাজার থেকে এক লক্ষ ৬০ হাজার টাকা আদায়ের কথা। এতে করে গড়ে প্রতি বাজারে ৫০-৫৫ হাজার টাকা এবং বছরে ৫২ সপ্তাহে বাজার থেকে সম্ভাব্য ২৬-২৮ লক্ষ টাকার মতো আদায় হবে। অথচ ১৪২৯ বাংলা সনে এই বাজারের ইজারামূল্য ছিল ৭৭ লক্ষ ২১ হাজার পাঁচ’শ টাকা ও ভ্যাটসহ ইজারামূল্য ছিল ৯৮ লক্ষ টাকা। এরআগে ১৪২৭ বাংলা সনে এই বাজারের ইজারামূল্য ছিল এক কোটি ছয় লক্ষ টাকা।
বর্তমানে নতুন লোক দিয়ে খাজনা সংগ্রহ করলে ৮০-৮৯ লক্ষ টাকা বছরে সংগ্রহ করা যাবে। এতে সরকার আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। অন্যথায় বছর শেষে ৫২-৬০ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাবে রাষ্ট্র। আবার মাসিক অনুপাতে বাজারটি প্রকাশ্যে নিলাম ডাকা হলে সেক্ষেত্রে কমপক্ষে সাত-আট লক্ষ টাকা ডাক হবে অভিযোগকারীদের দাবী।
এ বিষয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান খানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বাজারটি খাস কালেকশন দেখানো হলেও ভেতরে অন্যকিছু লুকায়িত। সাবেক চেয়ারম্যান মশিউর রহমান লিটন ও বর্তমান ইউপি আ.লীগের সভাপতি সামছু মহাজন এদের কয়েকজনের কাছে ৭২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বাজারটি এক বছরের জন্য দেওয়া হয়েছে। এই টাকা আগেই নিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত তিন হাটে বাজারের খাস কালেকশনের নামে এক লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। এই সিন্ডিকেটের সাথে ইউএনওসহ উপজেলা আ.লীগের নেতৃবৃন্দ সম্পৃক্ত থাকার কথা জানতে পারেন তিনি।
এ ব্যাপারে ইউএনও কাবেরী জালাল বলেন, তিনবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরেও কেউ দরপত্র দাখিল করেনি। দরপত্রে অংশ না নেওয়ায় বাজার খাস কালেকশনে দেওয়া হয়েছে।
নায়েব বুলবুল আহমেদ বলেন, বাজারের দিন সর্বক্ষণ উপস্থিত থাকি। যতটুকু সম্ভব কালেকশন বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। বৈশাখ মাস ধান কাটার মৌসুম। বাজারে লোকজনের আসা-যাওয়া আগের থেকে কম। আজ (মঙ্গলবার) এ মাসের খাস কালেকশনের প্রায় দুই লক্ষ টাকা কোষাগারে জমা দেওয়া হবে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।