কে.এম. সাখাওয়াত হোসেন : নেত্রকোনা কেন্দুয়ার মোজাফফরপুর ইউনিয়নে হারুলিয়া গ্রামের গ্রাম পুলিশ সদস্য (চৌকিদার) মৃত আজির উদ্দিনের ছেলে কামাল হোসেন ওরফে হেনু মিয়া ২০১৪ সালের দিকে ঢাকায় রিকশা চালাতেন। বর্তমানে তার নিজ গ্রামে জালিয়ার, এলংসি, কালারিয়া ও চিচুয়া এই চার হাওরে দুই কোটি টাকা মূল্যমানের ১০ একর (এক হাজার শতাংশ) কৃষি জমি। কেন্দুয়া পৌরশহরে শান্তিবাগ এলাকায় সিনেমা হল সংলগ্ন রয়েছে পাঁচ শতাংশ জায়গার উপর ৫০ লক্ষ টাকা মূল্যের পাঁচতলা ফাউন্ডেশনের দুইতলা ভবনসহ একই এলকায় স’মিলের সন্নিকটে আরও এক কোটি টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ জায়গা।
ব্যাংকে তার প্রায় এক কোটি টাকারও বেশি জমাসহ নিজ গ্রামে রয়েছে আরও ৫০ লক্ষ টাকা মূল্যের দুটি একতলা ভবনের বাড়ি। ২০১৪ সালের পূর্বে হেনু মিয়ার বাবা চৌকিদার আজির উদ্দিনের বসত ভিটে ছাড়া কোন সম্পদই ছিল না। গত ১১ বছরে হেনু মিয়া কীভাবে পাঁচ-সাত কোটির টাকার সম্পদের মালিক হলেন- এই সকল বিষয়ে অভিযোগ আনেন একই গ্রামের আমিরুল ইসলামের ছেলে মো. বাচ্চু মিয়া, জুবেদ আলীর ছেলে আল আমিন ও মৃত ইমান আলীর ছেলে জানু মিয়া।
তারা চলতি মাসের গত ৭ মে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবরে ডাকযোগে অভিযোগপত্র প্রেরণ করেন। এর অনুলিপি নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক, কেন্দুয়া উপজেলার চেয়ারম্যান ও ইউএনও, র্যাব-১৪ এবং কেন্দুয়া প্রেসক্লাবে প্রেরণের কথাও জানান অভিযোগকারীরা।
অভিযোগকারীরা জানায়, উত্তরাধিকার সুত্রে এতো সম্পত্তির মালিক ছিলেন না হেনু মিয়া। হেনু মিয়াকে ঢাকা শহরে রিকশা চালাতে দেখেছেন। কয়েক বছরের ব্যবধানে কীভাবে এতো সম্পদের মালিক হলেন, হেনু মিয়ার আয়ের উৎস কি, এসব সম্পদ বৈধ না অবৈধ উপায়ে অর্জন, তিনি (হেনু) কি ধরণের আলাদিনের চেরাগ পেলেন? এমন প্রশ্ন অভিযোগকারী তিনজনের।
এব্যাপারে কামাল হোসেন ওরফে হেনু মিয়া কৃষি, পৌরশহরে জমিসহ চারতলা বিল্ডিংয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ক্লাশ অষ্টম-দশম পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। ১৯৯০-১৯৯৫ সালের পর থেকে আমি গ্রামের বাহিরে। ঢাকায় থেকে ব্যবসা করেছি। টিভি-ফ্রিজের শো রুম, মুদি, ফলের, বিকাশ এসবের দোকান ছিল। ২০-৩০টি রিকশা-ভ্যানের গ্যারেজও ছিল। মানুষদেরকে দিয়ে ব্যবসা করিয়েছি। বাবার মোটামুটি সম্পদ ছিল।
পাঁচ-সাত কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ দুদকে প্রেরণের বিষয়ে হেনু মিয়া বলেন, কষ্টের বিনিময়ে সাফল্য, অবৈধ কোন কিছুতে সাফল্য আসে না। সৎ পথে পাঁচ-দশ তলা বিল্ডিং করে থাকলে তা শত্রুতাগিরি করে তো করেনি। গ্রামের এক ঘটনায় আমাকে মামলায় দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। অথচ ঘটনাস্থলে ছিলাম না। শত্রুতা করে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।
আপনি (হেনু মিয়া) আয়কর প্রদান করেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জমি ও পৌরসভার ট্যাক্স দেই। পৌরসভার মেয়র আমার বিষয়ে সব জানেন। তবে তিনি আয়কর প্রদানের বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনিসহ তার পুরো পরিবার আওয়ামীলীগ ঘরোনা বলে দাবী করেন এবং একপর্যায়ে সুদের ব্যবসার (দাদন) কথা স্বীকার করেন।