তানভীর আহমেদ: সুনামগঞ্জ:
‘প্রতিবছর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে আগাম বন্যার আতঙ্ক নিয়ে হাওরে বোরো ধান কাটতে নামতেন কৃষকরা। ধান পাকার পর তা কাটতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াত ঝড়-বৃষ্টি আর বজ্রপাত। এ বছর পুরো বৈশাখ মাসে দু-একদিন ছাড়া পুরো সময়জুড়ে ছিল ফকফকে রোদ। ধান কাটার পর মাড়াই করে সাথে সাথে রোদে শুকিয়ে নির্বিঘ্নে কৃষকরা গোলায় তুলেছেন সোনালী ধান। ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ছোট-বড় ২৩টি হাওরে শতভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।’
চলতি মৌসুমে হাওরে উচ্চ ফলনশীল ও আগাম ফলনশীল জাতের ধান রোপণ করায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অল্প সময়ের মধ্যে হাওরে ধান কাটা শেষ হয়েছে। সেই সাথে বোরো ফসলের বাম্পার ফলনে খুশি হাওরের কৃষকরা। একই সাথে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় স্বস্তিতে ধান কাটা শেষ হয়েছে। ২০১৭ সালে আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে হাওরডুবির পর এমন সোনার বৈশাখ পাননি কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, ‘চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় ১৭ হাজার ৪শত ২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ করা হয়েছে। এরমধ্যে হাওরে রোপণ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৩শত ৯০ হেক্টর এবং ৪হাজার ৩০ হেক্টর বিভিন্ন গ্রামের পাশের জমিতে (কিত্তায়) রোপন করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৫ হাজার টন। এরমধ্যে হাওরে শতভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে এবং নন হাওরে ৪৭ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে।’
উপজেলার বৃহত্তর শনি হাওরের কৃষক মো. শামসুল আলম বলেন, ‘আমার জীবনেও এরকম ভালো ফসল হতে দেখিনি। আল্লাহ এ বছর আমাদের খুবই ভালো ফলন দিয়েছেন। এমন সোনার ফসল ঘরে তুলে মনটা শান্তি হইছে।’
মো. আব্দুন নূর নামক এক শ্রমিক বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে হাওরে ধান কাটি। প্রত্যেক বছর মেঘ-বৃষ্টির কারণে ধান কাটতে কষ্ট হয় আমাদের। বৃষ্টির মধ্যে কোমড় পানিতে নেমে ধান কেটেছি। এবারের মতো ভালো বৈশাখ কোনো বছর পাইনি। এ বছর ধান কাটায় কোনো বৃষ্টি নেই, অনেক রোদ। ফলনও ভালো। তাই গরমে ঘাম ঝড়লেও ধান কাটতে ভালো লাগছে।’
কৃষক সুহেল মিয়া বলেন, ‘এবার আমাদের বাম্পার ফলন হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি নেই, রোদ্রময় দিন। ধান কাটায় কোনো ঝামেলা হইছে না। আমরা আনন্দের সাথে ফসল ঘরে তুলছি।’
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাছান-উদ-দৌলা বলেন, ‘এ বছর নির্বিঘ্নে কৃষক ধান কাটা শেষ করেছেন। শুধু কাটা না, সাথে সাথে ধান শুকিয়ে ঘরেও তুলতে সক্ষম হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে উপজেলায় ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে। এবছর লক্ষ্যমাত্রার ছেয়ে ধান উৎপাদন বেশি হয়েছে।’