যে গর্ভধারিনী ”মা” সন্তানদের বড় করে তুলেছেন, সেই মাকে অত্যাচার করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন আপল দুই ছেলে। বর্তমানে মানুষের বাড়ি বাড়ি ভিক্ষাবৃত্তি করে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন বৃদ্ধা সেই মা। এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি নীলফামারী ডিমলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর তিতপাড়া গ্রামে।
জানা যায়, ওই গ্রামের মৃত পামোর উদ্দিনের স্ত্রী মেহেরবানু (৭৫) তার দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে। দুই মেয়ে স্বামীর সংসার নিয়ে ব্যস্ত। দুই ছেলের মধ্যে বড় মহসিন (৫০) ও ছোট ছেলে মজিবর (৪০) কৃষক ও ভ্যানচালক। পৈত্রিক বসতভিটায় তারা দুই ভাই বসবাস করেন এবং ক্ষুদ্র ব্যবসার পাশাপাশি আবাদী জমিতে ফসল উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করেন উভয়। বড় ছেলে মহসিনের পাকা তিনটি রুম রয়েছে। ছোট ছেলে কৃষক ও ভ্যান গাড়ি চালক। মৃত স্বামীর ভিটাতেই এই বৃদ্ধা দুই ছেলের সাথে থাকলেও তাকে ভিক্ষাবৃত্তি করে নিজের খাওয়া জুটাতে হতো।
সম্প্রতিক সময়ে দুই ছেলের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হলে তা মামলা পর্যন্ত গড়ায়। এক পর্যায়ে বড় ছেলে মাকে তার পক্ষে সাক্ষী দিতে বলে ও ছোট ছেলে তার পক্ষে মাকে সাক্ষী দিতে বলে। বৃদ্ধা মা দুই ছেলের বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে কোন ছেলের পক্ষে মামলায় সাক্ষ্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে। এতে দুই ছেলেই মাকে বাড়ি থেকে বাহিরে বের করে দেয়।
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, দুই ছেলেই বদমেজাজি তাই তারা কিছুই বলতে পাবেন না। চলতি রমজানের দ্বিতীয় রোজায় দুই ভাই তাদের বৃদ্ধাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এরপর বাড়ির পাশে একটি গাছতলায় খোলা আকাশের নিচে থাকছেন ওই বৃদ্ধা মা। ওই বৃদ্ধা ”মা” স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে বিচার চাইলেও বিচার পাননি বলে অভিযোগ করেন।
গত বুধবার (১৯শে এপ্রিল) বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয় স্থানীয় মহলে। পরে ডিমলা থানা পুলিশের সহায়তায় ওই বৃদ্ধাকে তার ছোট ছেলে ঘরে তুলে নেয়।
ডিমলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লাইছুর রহমান জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর এসপি স্যারের নির্দেশে দুইজন অফিসারকে পাঠানো হয় এবং ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। বড় ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ছোট ছেলেকে পাওয়া যাওয়ায় সে তার ভুল বুঝতে পেরে মাকে তার ঘরে তুলে নেয়। এ ব্যাপারে ওই পরিবারের সাথে বসে তাদের সমস্যা সমাধান করা হবে বলে জানান ওসি।